অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করছে না ব্রিটেন
৫ জানুয়ারি ২০২১ ০০:৫৫
বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের দুর্নীতি, অনিয়ম এবং যুদ্ধসংক্রান্ত গোপন নথি ফাঁস করে আলোচনায় আসা জনপ্রিয় ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা সম্ভব নয় বলে রায় দিয়েছে লন্ডনের একটি আদালত।
সোমবার (৪ জানুয়ারি) এই রায় ঘোষণা করেন ব্রিটিশ বিচারক ভেনেসা ব্যারাইটজার।
এদিকে, বিচারক অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়টি আমলে নিয়ে বলেন, তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে ‘নিপীড়নমূলক’। যার ফলশ্রুতিতে তার জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হতে পারে।
এর আগে, ২০১০ সালে হুইসেলব্লোয়ার চেলসি ম্যানিংয়ের সহায়তায় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মার্কিন মিলিটারি সংশ্লিষ্ট প্রায় পাঁচ লাখ নথি ফাঁস করেন। ওই সংকলন উইকিলিকসকে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় নিয়ে আসে। ওই নথিগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান ও ইরাকে ইউএস আর্মির বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য সন্নিবেশ করা হয়।
সেই ঘটনার পর, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিসহ ১৮টি অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। ওই মামলাগুলোতে বিচারের মুখোমুখি করতেই অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করার আবেদন করা হয়েছিল। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
অন্যদিকে, অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীর উত্থাপিত মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি সংক্রান্ত আপত্তি আমলে নিয়ে বিচার করলেও, বাক-স্বাধীনতার যুক্তি খারিজ করে দেন।
এ ব্যাপারে আদালত বলে, অপরাধ প্রমাণিত হলে তা বাকস্বাধীনতার যুক্তিতে সুরক্ষা পাবে না।
প্রসঙ্গত, ৪৯ বছর বয়সী জুলিয়ান ১৯৭১ সালে উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার টাউনসভিলে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে তিনি উইকিলিকস নামের একটি ওয়েব প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। যে কেউ চাইলে গোপন নথি সেখানে প্রকাশের জন্য দিতে পারত। ২০১০ সালে উইকিলিকস আলোচনায় আসে। সে সময় তারা ২০০৭ সালের একটি গোপন ভিডিও প্রচার করে, যেখানে বাগদাদে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ব্যবহার করে মার্কিন মিলিটারি ডজনখানেক মানুষকে মেরে ফেলে, যার মধ্যে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের দুই সংবাদকর্মী ছিলেন।
কিছুদিনের মধ্যেই, উইকিলিকস মার্কিন কূটনীতির লাখ লাখ গোপন নথি প্রকাশ করতে শুরু করে। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন থেকে শুরু করে সৌদি আরবের রাজপরিবারের সদস্যদের বিষয়ে নানান সমালোচনামূলক বার্তা, আফগান যুদ্ধের মার্কিন অপারেশনের নানা তথ্য ছিল।
পরবর্তীতে, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে গুপ্তচরবৃত্তিসহ ১৮টি অভিযোগ আনা হয়। এছাড়াও, যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে চায় সুইডেন। ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনে ইকুয়েডরের অ্যাম্বেসিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান। ২০১৯ সালে ইন্টারপোলের গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে তাকে কারাগারে নেওয়া হয়।
ওদিকে, অ্যাসাঞ্জকে গ্রেফতার এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত – সংবাদমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে মনে করেন অনেকেই। সোমবার (৪ জানুয়ারি) ব্রিটিশ আদালত যেন তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে না দেয় সেজন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছিল।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের পক্ষ নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিলস মেলজার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে অপরাধ হিসেবে দেখাতে চাইছে।
উইকিলিকস চেলসি ম্যানিং জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ প্রত্যর্পণ ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্র