‘প্রবাসীদের দেশের মানুষ হিসেবেই মর্যাদা দিতে হবে’
৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:০৩
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসী শ্রমিক অভিবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, প্রবাসীরা কিন্তু এদেশের মানুষ, সেভাবেই তাদের মর্যাদা দিতে হবে। যারা বিদেশে যায় তাদের কর্মসংস্থান ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, তাদের নিরাপত্তা ঠিকমতো আছে কিনা- সেগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে হবে। কারণ দায়িত্বটা আপনাদের ওপর বর্তায়।
বুধবার (৬ জানুয়ারি) সকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২০’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে যুক্ত হন।
মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথচলায় প্রবাসীদের বিভিন্ন অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই দেশটা এগিয়ে যাক। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দেশ শক্তিশালী হোক। আমরা আত্মমর্যাদাশীল ও আত্মনির্ভরশীল হই। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরশীল বা আত্মমর্যাদাশীল হিসেবে গড়ে তোলার পরিবর্তে পরনির্ভরশীল করেছিল। সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সরকারে এসেছি তখন থেকে প্রচেষ্টা চালিয়েছি আমাদের দেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে আত্মমর্যাদাশীল ও আত্মনির্ভরশীল হবে। আজ আমাদের বাজেট প্রায় ৯৭ বা ৯৮ভাগ নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমাদের এখানেও কাজের কোনো অভাব হবে না। দক্ষ কর্মী আমাদেরও প্রয়োজন। বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। কাজেই সেদিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিটেন্স পাঠানোর অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের রেমিটেন্স প্রবাসীরা পাঠাচ্ছে। আমরাও করোনাকালে তাদের প্রণোদনা দিয়েছি। ফলে আজ রেমিটেন্স বেড়েছে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণলায়ে যারা কর্মরত বা বিদেশে যারা কর্মী পাঠায় তাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। কারণ দায়িত্বটা আপনাদের ওপর বর্তায়। আসলে মানুষ অনেক সময় নানাধরনের কথা চিন্তা করে। ভাবে যে, বিদেশে গেলে বোধহয় অনেক অর্থ উপার্জন করব। অনেকে আবার দালালের খপ্পরে পড়ে অন্ধকার পথে পা বাড়ায়।’ প্রধানমন্ত্রী তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এধরনের পরিস্থিতির শিকার হবেন না। দালালদের খপ্পরে পড়বেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে যে ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি তার মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধন করার সুযোগ আছে। আর এই নিবন্ধনকৃতদের যেখানে কাজের সুযোগ হবে, সেখানে তাদের পাঠানো হবে। সেজন্য আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। কিন্তু আপনারা যদি কারও প্ররোচনায় বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়েন, সেটা নিজের জন্য, পরিবারের জন্য খুবই কষ্টকর।’
প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে লিবিয়ায় প্রবাসী শ্রমিকদের নিহত হওয়ার ঘটনা স্মরণ করে বলেন, ‘এখন আমাদের দেশের যেমন কাজের অভাব নেই, খাবারেরও অভাব নেই আল্লাহর রহমতে। কাজেই এখন আর সোনার হরিণ ধরার পিছনে দয়া করে অন্ধের মতো ছুটবেন না। আপনারা নিবন্ধন করে তার মাধ্যমে যান, সেটাই আমরা চাই।’ প্রবাসী শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও অবহিত করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অনেক জায়গায় অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। কাজেই অনেকে কাজ হারাচ্ছেন। যারা দেশে ফিরে আসছেন তাই তাদের জন্যও সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। করোনাকালে প্রবাসী শ্রমিক (নিবন্ধিত/অনিবন্ধিত) যারাই করোনাভাইরাসে মারা যাবে তাদের তিন লাখ টাকা করে পুনর্বাসনের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।’ ২০১৯ সালে বিশেষ বিমার স্কিমও উদ্বোধন করা হয়েছে সে কথাও স্মরণ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেনব দেশে দশ হাজারের বেশি অভিবাসী আছে সেখানে আমরা একটি শ্রম উইং খুলে দিচ্ছি। কারণ তারা যেন সেখানে কোনো সমস্যা হলে সেখানে যেতে পারে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারে। আর যেখানে বেশি কর্মী সেখানে নিজেদের চ্যান্সেরি ভবন করছি। প্রবাসীদের সবরকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখা, ফরেন রিজার্ভ বাড়ানো ক্ষেত্রে প্রবাসীদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে। তার জন্য আমরা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাও নিয়েছি। আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। হয়তো যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে আমরা পারিনি। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবো। ইতোমধ্যে ৯৯ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। যাদের ভূমি নেই, গৃহ নেই, তাদের আমরা ঘর করে দেবো- মুজিববর্ষে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’