হাইব্রিডমুক্ত শক্তিশালী তৃণমূল চায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ
৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:০৫
ঢাকা: তৃণমূলে হাইব্রিডমুক্ত শক্তিশালী নেতৃত্ব গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এ জন্য ইউনিট কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া শেষ করে ধাপে ধাপে ওয়ার্ড, থানা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত এসেছে। মহানগর উত্তরের আওতাধীন প্রায় তিন হাজার ইউনিট কমিটিকে ঢেলে সাজাতে চায় সংগঠনটি। এরপরে ধাপে ধাপে সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সরকারের ধারাবাহিক পথচলাকে মসৃণ রাখতে ‘হাইব্রিড’, ‘কাউয়া’, ‘অনুপ্রবেশকারী’মুক্ত সংগঠন গড়ে তুলতে চান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে শিগগিরই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সাংগঠনিকভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে হোয়াইট হল কনভেনশন সেন্টারে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের দ্বিতীয় সভায় সাংগঠনিক এ সব সিদ্ধান্ত হয়। সভায় তূণমূলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক শৃঙ্খলার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে সারাবাংলাকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত ১৯ নভেম্বর সম্মেলনের প্রায় একবছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ কমিটিতে চারজন সংসদ সদস্য রাখা হয়। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন নতুন নেতাকেও জায়গা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর একইদিনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মাধ্যেম দুটি শাখারই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। উত্তরে শেখ বজলুর রহমানকে সভাপতি এবং এস এম মান্নান কচিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অন্যদিকে দক্ষিণে আবু আহম্মদ মন্নাফীকে সভাপতি এবং হুমায়ুন কবিরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের পর মহানগর উত্তরকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্য স্থির করে বজলু-কচি’র নেতৃত্বাধীন কমিটি।
মঙ্গলবারের সভায় একাধিক নেতা সংগঠনকে শক্তিশালী করার বিভিন্ন মতামত দেন। নেতারা বলেন, “আওয়ামী লীগে এখন একটি কথা বেশি আলোচনা হয়। তা হলো হাইব্রিড, কাউয়া, অনুপ্রবেশকারী। এদের হাত থেকে ঢাকা মহানগর উত্তরকে মুক্ত রাখার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। কারণ এরা তৃণমূল থেকে বিভিন্ন কৌশলে দলে ঢুকে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। কোনো অবস্থাতেই যেন ‘হাইব্রিড’, ‘অনুপ্রবেশকারী’ তথা বিতর্কিতরা আসতে না পারে, সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক ও কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।”
ইউনিট কমিটিগুলো গঠনের ক্ষেত্রে ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের মতামত নিয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। নেতারা বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্ট অবস্থান; কোনো সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজরা আওয়ামী লীগ করতে পারবে না। যারা কমিটিতে আসতে চায় তাদের ব্যাপারে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। যাদের নামে সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই, সম্পৃক্ততা নেই, তাদেরকে দিয়ে তৃণমূলের কমিটি করতে হবে।’
নেতারা আরও বলেন, ‘মানুষকে দূরে সরিয়ে আমরা সংগঠন করব না। আওয়ামী লীগ সেটি কখনও করে না। আওয়ামী লীগ গণমুখি সংগঠন। তাই সমাজের জনপ্রিয় গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে যদি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করা হয়, তাহলে সংগঠন শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি সংগঠনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। এ আস্থা-বিশ্বাস নিয়েই আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে পারব।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রথমে তৃণমূল (ইউনিট কমিটি) করে তারপরে ওয়ার্ড-থানা কমিটি করা হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করব।’
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সহ-সভাপতি আসলামুল হক বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের গতিটাকে ধরে রাখার জন্য তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে হবে। এটির কোনো বিকল্প নেই। গঠনতন্ত্রের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের আছে বলে মনে করি না। গঠনতন্ত্রের যে বিধান রয়েছে, সেই বিধান অনুযায়ী ইউনিট কমিটির প্রক্রিয়া শেষ হলে ওয়ার্ড কমিটি পরে থানা কমিটি করা হবে। সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করার বিধান রয়েছে। অনেক সময় সেটি না করে ঘরে বসে কমিটি করে গঠন করে দেওয়া হয়। গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রথমে তৃণমূলের কমিটি করব।’
ইউনিট কমিটি এবং কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি পৃথক পৃথকভাবে করারও পরামর্শ দেন সিনিয়র এ সহ-সভাপতি।
আসলামুল হক আরও বলেন, ‘ইউনিট কমিটিতে যারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থাকবেন, নিজ নিজ এলাকায় তাদের ব্যক্তিগত অবস্থান ইতিবাচক কি না সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ মাইম্যান হিসেবে এ সব কমিটিতে কেউ যখন নেতা হন তাদের অনেকের ইতিবাচক ভাবমূর্তি থাকে না। আমরা যেহেতু সংসদ সদস্য, এটি আমরা প্রত্যক্ষভাবে লক্ষ্য করি।’
আসলামুল হক আরও বলেন, ‘যে যত ত্যাগীই হোক না কেন, তিনি যদি চাঁদাবাজ হন তাহলে তার ত্যাগের কোনো মূল্য থাকে না। সে যত ত্যাগীই হোক, সে যদি দখলদার, মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, জুয়াড়ি হয় তাহলে কিন্তু তার ত্যাগের ১০ শতাংশ মূল্য নেই। এ রকম ত্যাগী নেতা আমাদের দরকার নেই।’
সংগঠনকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া হিসেবে আরও বলেন, ‘থানা ও ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পরামর্শ করে ইউনিট কমিটি করতে হবে। আমরা এগুলো কঠোরভাবে মনিটরিং করব। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মতো সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন করে দিতে হবে। পাশাপাশি সম্মেলনের মাধ্যমে থানা-ওয়ার্ডে যেন কমিটি হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।’
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘যার যার দায়িত্ব সে যেন তার দায়িত্ব পালন করে। কেউ যেন কারও ওপর মাতব্বরি না করে, ওয়ার্ডের যে দায়িত্ব ওয়ার্ড নেতারা তা পালন করবেন। সেখানে আমাদের মহানগর নেতারা সমন্বয় করবেন। থানার নেতারা থানার দায়িত্ব পালন করবেন। যেখানে ল্যাপস হবে সেখানে আমরা তাদের ভুল শুধরিয়ে দেব। আমাদের যে দায়িত্ব আমরা ঠিকমতো পালন করব। সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য গঠনতন্ত্র মেনে আমরা ধাপে ধাপে এগুলোকে আরও শক্তিশালী করব। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে, সেই গতি যেন সঠিক থাকে। কোনোভাবেই যেন গতি বাধাগ্রস্ত না হয়।’
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘সারাদেশ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঢাকায় কী হচ্ছে সেটি জানতে চায়। কেননা ঢাকা হচ্ছে রাজনীতিতে পুরো দেশের দর্পণ।’