Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের স্মৃতি স্থাপনা ভাঙার ওপর স্থিতাবস্থা


৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:৩৯

ঢাকা: চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জ এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি (বর্তমানে শিশুবাগ স্কুল) দখল ও ভাঙার ওপর একমাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী আদেশের  দিন ঠিক করেছেন আদালত। এর ফলে বর্তমানে বাড়িটি যে অবস্থায় আছে, আগামী একমাস এটি সেই অবস্থাতেই থাকবে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। তার সঙ্গে ছিলেন এম মাসুদ আলম চৌধুরী। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

আরও পড়ুন- দেশপ্রিয়র বাড়ি রক্ষায় আদালতে যাবেন বিশিষ্টজনেরা

আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বলেন, ‘চট্টগ্রামের যাত্রামোহন সেনগুপ্তের ঐতিহাসিক বাড়িটি দখল, ভাঙা ও সেখানে অবস্থানের ওপর একমাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন হাইকোর্ট। যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটিকে দখল এবং ভাঙাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ওই স্থাপনাকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না— তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ছয় জনকে রুলের জবাব দিতে হবে।’

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পরিচালক, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এবং শিশুবাগ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে রুলের জবাব দেওয়ার জন্য বলেছেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে রিট আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আদালতকে বলেছি— এই বাড়িটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। গুরুত্ব বিবেচনায় বাড়িটি সংরক্ষণ করা জরুরি এবং একে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটি দখল ও ভাঙার ওপর একমাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে রুল জারি করেছেন। এ ছাড়া এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে ওই বাড়িটির যাবতীয় কাগজপত্র আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আদালতে পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই দিন এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।’

আরও পড়ুন- ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের স্মৃতি স্থাপনায় বুলডোজারের আঘাত

এর আগে গত ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জ এলাকার শিশুবাগ স্কুলের ভবন ভাঙা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। দুপুরে ভবন ভাঙার সময় এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায় স্থানীয়দের। পরে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্ট্রান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তসহ বিভিন্ন জনের হস্তক্ষেপে ভবন ভাঙা স্থগিত রাখা হয়। যদিও এর আগেই স্কুলের বেঞ্চ-টেবিলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বের করে এম ফরিদ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি তার দখল স্বত্ব বুঝে নিতে সেখানে ভবনের ওপরের একাংশ বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলেন।

রিটকারী আইনজীবী এম মাসুদ আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি, যা ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এ বাড়িতে মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল নেহেরু, নেতাজি সুভাষ বসু, মৌলানা মুহাম্মদ আলী ও মৌলানা শওকত আলী ভ্রাতৃদ্বয়সহ অনেক নেতা এই বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া মাস্টারদা সূর্যসেনের ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে যেসব আইনজীবী মাস্টারদার পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য চট্টগ্রামে এসেছিলেন, তারাও এই বাড়িতে ছিলেন।’

জানা যায়, ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। চট্টগ্রামের এই আইনজীবীর ছেলে হলেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। ব্যারিস্টার যতীন্দ্রমোহনও ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। তিনি কলকাতার মেয়রও হয়েছিলেন। ইংরেজ স্ত্রী নেলী সেনগুপ্তাকে নিয়ে কিছু দিন ভবনটিতে ছিলেন তিনি। মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র বসু, শরৎ বসু, মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সময় এই বাড়িতে এসেছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবীরাও এই বাড়ির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সূর্য সেন, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তীর হয়ে মামলা লড়েছিলেন যতীন্দ্রমোহন। এতে ব্রিটিশ শাসকদের রোষানলে পড়ে ১৯৩৩ সালে কারাগারে মৃত্যু হয়েছিল যতীন্দ্রমোহনের। এরপর নেলী সেনগুপ্তা ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রহমতগঞ্জের বাড়িটিতে ছিলেন। ১৯ গণ্ডা এক কড়া পরিমাণ জমিটি পরে শত্রু সম্পত্তি ঘোষিত হয়।

এরপর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি জমিটি লিজ বা ইজারা নিয়ে ‘বাংলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন সেখানে। পরে নাম বদলে সেই ভবনে ‘শিশুবাগ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইছহাকের সন্তানরা স্কুলটি পরিচালনা করছেন।

এদিকে, হঠাৎ স্কুল ভবন ভাঙার খবরে অনেকেই ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় সোমবার দুপুরেই ঘটনাস্থলে মানববন্ধন সমাবেশের আয়োজন করে চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র। আইনজীবী রানা দাশগুপ্তসহ অন্যান্যরা সেখানে বক্তব্য রাখেন।

বাড়ি দখল বাড়ি ভাঙার ওপর স্থিতাবস্থা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়ি হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর