‘ভর্তুকি দিয়ে হলেও পাটবীজের উৎপাদন বাড়াতে হবে’
৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৫৫
ঢাকা: ভর্তুকি দিয়ে হলেও পাটবীজের উৎপাদন বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক)। বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ‘উচ্চফলনশীল পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।
জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে কৃষক পর্যায়ে প্রত্যায়িত বীজের চাহিদা হলো ৫ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন। আর চাহিদার বিপরীতে বিএডিসি সরবরাহ করে মাত্র ৭৭৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে তোষা পাট ৫১৫ টন আর দেশি ২৬০ টন। তোষা পাটবীজের প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে আনতে হয়। এই বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ৫ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে।
আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ এই ৫ বছরের মধ্যে দেশে ৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাটবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই তোষা পাটবীজ উৎপাদনের জন্য ৮ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে চাষের প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে সবসময় অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। তার সঙ্গে পাটবীজ রফতানির ওপর সংশ্লিষ্ট দেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও ভয় থাকে।’
উল্লেখ্য, পাটআঁশ এবং পাটবীজ ফসল দু’টি আলাদা ফসল। পাটবীজ রবি মৌসুমের (আগস্ট-ডিসেম্বর) ফসল। তোষা পাটবীজ সাধারণত আগস্ট-ডিসেম্বর মাসের ফসল। এ সময়ে উচ্চমূল্যের রবি ফসলের পরিবর্তে কৃষক পাটবীজ উৎপাদনে তেমন আগ্রহী নন। তাই পাটবীজ উৎপাদনের পরিবর্তে পাট চাষের সময় কৃষক বাজার থেকে বীজ কিনে পাট চাষ করা লাভজনক বলে মনে করে। দেশে মূলত দেশি ও তোষা এ দুই জাতের পাটের চাষ হয়। বর্তমানে দেশি পাট ১৫ ভাগ ও তোষা পাট ৮৫ ভাগ উৎপন্ন হয়। তোষা পাটবীজের চাহিদার প্রায় ৮৫-৯০ ভাগ ভারত থেকে আমদানিকৃত জেআরও-৫২৪ জাতের মাধ্যমে মেটানো হয়।
‘পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে’
অথচ, জিনোম গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিটউট (বিজেআরআই) উদ্ভাবিত পাটের জাত রবি-১ (তোষা পাট-৮) এর ফলন জেআরও-৫২৪ জাতের চেয়ে ১০-১৫ ভাগ বেশি। এটি ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলের কৃষকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। যথাযথভাবে রবি-১ পাট জাতকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাট বীজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হবে।
এসময় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অন্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে পাটবীজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সমন্বতি উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আমরা পাটবীজের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারি না। আমরা পাটবীজের উৎপাদন বাড়াব। পাটের উৎপাদন বাড়াব। পাট চাষকে এদেশের চাষিদের নিকট লাভজনক ফসলে উন্নীত করব। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য পাটের অসাধারণ ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আবার ফিরিয়ে আনব।’
সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) মো. মাহবুবুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব ও মহাপরিচালক (বীজ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবুল কালাম, এনডিসি, সংস্থাপ্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম দস্তগীর গাজী পাটবীজ উৎপাদন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ভর্তুকি