সীমান্তে ফেলানী হত্যার ১০ বছর: এখনও ন্যায়বিচারের আশায় বাবা-মা
৭ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:৩৯
কুড়িগ্রাম: জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১০ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও ন্যায়বিচার পায়নি বাবা-মা। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় নির্মম হত্যার শিকার হয় কিশোরী ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার মরদেহ।
এনিয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠলে বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফের বিশেষ আদালতে দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস পান অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ। পরে এ রায়কে প্রত্যাখ্যান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুমে’র সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। এরপর কয়েক দফা ফেলানি হত্যার বিচার কার্য অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিচার এখনও অমীমাংসিত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা-মা।
২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যার বিচার পুনরায় শুরু ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ২ জুলাই আদালত পুনরায় আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই আবার ‘মাসুম’ ফেলানির বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। পরের দুই বছর কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি। এরপর ২০১৯ এবং ২০২০ সালে কয়েকবার শুনানির তারিখ ঠিক হলেও শেষ পর্যন্ত তা শেষ হয়নি।
এ অবস্থায় মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানির পরিবার ও এলাকাবাসী। ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে অনেক ঘুরেছি। মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। মেয়ে আমার চলে যাওয়ার ১০ বছর হলো, আজও তার বিচার পেলাম না। বারবার বিচারের তারিখ বদলায়। তাহলে বিচার পাব কিভাবে?’
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘ফেলানী হত্যার এত বছর হয়ে গেছে আজও বিচার পাইলাম না। আমি দুই দেশের সরকারের কাছে সঠিক বিচার দাবি করছি।’
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, ফেলানী হত্যার বিচারের রায়ে বিএসএফ সঠিক সিদ্ধান্ত না দেয়ায় সুপ্রিম কোর্টে বিচারটি গড়ায়। ফলে সেখান থেকেই রায়টি আসবে। তিনি বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের মামলায় কয়েক দফা শুনানির তারিখ পিছিয়ে গেছে। বর্তমান কোভিড-১৯ এর জন্য সেখানে ভার্চুয়াল কোর্ট চলছে। যদি ভার্চুয়ালিও বিচারের শুনানি হয় তাহলে দ্রুত এর নিষ্পত্তি হতে পারে। না হলে পরিস্থিতি ভালো হলে রিটটি শুনানি হবে। আশা করছি ফেলানীর পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।’
উল্লেখ্য, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতে দিল্লিতে। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। মেয়ের বিয়ে দিতে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন অনন্তপুর সীমান্তে। ৭ জানুয়ারি ভোরে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ী অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের ওপর মই বেয়ে নামার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর। লাশ ঝুলে থাকে সীমান্তের কাঁটাতারে।
কিশোরী ফেলানী হত্যা ফেলানী হত্যা বিএসএফ বিএসএফ’র গুলি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী