আদু ভাইদের দিন শেষ: ওবায়দুল কাদের
৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৫২
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভালো ছাত্র যারা, রাজনীতির মাঠ তাদের দখলে নিতে হবে। তা না হলে রাজনীতি একসময় খারাপ মানুষদের দখলে চলে যাবে। বছরের পর বছর আদু ভাই থেকে ছাত্রনেতা হওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। আর এ ধারা বন্ধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘কর্মজীবনের কর্মশালা’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের এ সব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটি এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)’ যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের এলবিডি ওয়েব টিম ও সিআরআই’র কো-অর্ডিনেটর তন্ময় আহমেদ। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপকমিটির চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আব্দুল খালেক, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপ-কমিটির সদস্য সচিব শামসুন নাহার চাঁপা।
ওবায়দুল কাদের তার আলোচনায় টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন ও অগ্রগতির চলমান ধারার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ এদেশের উন্নয়ন ও ইমেজকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে বিষদাঁত আমরা ভেঙে দিয়েছি। জাতি আজ লোডশেডিং’র অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সেবাখাত বদলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সুযোগ-সুবিধা এখন বিশ্বমানের।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে নীরবে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটে চলছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম আজ মাদক সাইবার অপরাধ আকাশ সংস্কৃতির নেতিবাচক দিকসহ নানা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে যাচ্ছে। প্রযুক্তি আমাদের বদলে দিচ্ছে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের একদিকে আন্তর্জাতিকমানের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হবে। অপরদিকে নেতিবাচক দিক থেকে তরুণদের সুরক্ষা দিতে হবে।’
সরকারের দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশের তরুণ-তরুণীদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে এবং ক্যারিয়ার গড়তে প্রতিটি পরিবারের পাশে থাকতে চায় আওয়ামী লীগ বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের জীবনঘনিষ্ট এবং সময়োপযোগী উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ।’
বিশ্বে বাংলাদেশের তরুণ মেধা ও যোগ্যতায় প্রমাণ রেখে চলেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আইসিটি সেক্টরে, আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম স্থানে। আমাদের এ অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। তারুণ্যের শক্তিকে রাষ্ট্র নির্মাণে লাগাতে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। শেখ হাসিনার সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম জোরদার করে সামাজিক মূল্যবোধের রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে অবিরাম। যত বেশি সৃজনশীল কাজে তরুণদের সম্পৃক্ত করা যাবে ততই তারা বিপথগামিতা থেকে দূরে থাকবেন।’
মেধাবীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মেধাবীরা রাজনীতিতে না এলে রাজনীতি মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। চরিত্রবানরা রাজনীতিতে না এলে রাজনীতি চরিত্রহীনদের হাতে চলে যাবে।’
এ দেশের মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে অপরাজনীতি শুরু হয়েছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা সে অপরাজনীতি বন্ধের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে স্বস্তি এবং লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছেন। ছাত্রদের লেজুড়বৃত্তি এখন বন্ধ হয়ে হয়েছে। হল দখল আর ক্যাম্পাস দখলের রাজনীতি বন্ধ হয়েছে।’
‘ভালো ছাত্রদের রাজনীতির মাঠ দখল নিতে হবে, না হলে রাজনীতি খারাপ মানুষদের দখলে চলে যাবে’— এমন আশঙ্কা করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে সৃজনশীলতা আর মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ছাত্ররাজনীতির প্রাণশক্তি হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম, মূল্যবোধ আর ক্যারিয়ার। বছরের পর বছর আদু ভাই হয়ে ছাত্রনেতা হওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে। আর এ ধারা বন্ধ করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা আজকে ছাত্র রাজনীতিকে সুনামের ধারায় সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কার্যকর করছেন। নানা কারণে ঐতিহ্যের ধারা হারিয়েছে এ দেশের ছাত্ররাজনীতি। তাই ছাত্ররাজনীতিকে ঐতিহ্য ও সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতেই হবে। যারা এখনও তরুণদের হাতে পেট্রোল বোমা তুলে দিচ্ছে, আগুন সন্ত্রাসের পথে ঠেলে দিচ্ছে, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা শেখাচ্ছে তাদের নেতিবাচক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
‘শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নে একটি মতলবি মহল সহ্য করতে পারছে না। তারা নানান ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে তরুণ-যুবকদের একাংশকে ভুল শিক্ষা দিয়ে জনমানুষের প্রতিপক্ষ গড়ে তুলছে।’
তাই তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকের পৃথিবী প্রতিযোগিতাময়। নিজ যোগ্যতা দিয়ে স্থান করে নিতে হবে তোমাদের। নিজেদের যোগ্য করে তোলার বিকল্প নেই। তোমাদের অমিত সম্ভাবনা আর প্রাণশক্তি দিয়ে এদেশকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।’
আগামী দিনগুলো যত চ্যালেঞ্জপূর্ণ, তত সম্ভাবনাময় দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তোমাদের হাতে আছে আলাদিনের চেরাগের দৈত্যের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মেধাবী তারুণ্যকে হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনিমার্ণের চালিকাশক্তি।’