‘অবৈধ সম্পর্কের’ জেরে খুন হয় রেহেনা, মাফলারে মিললো সূত্র
৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:২৭
রাঙ্গামাটি: অবশেষে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া এলাকায় থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের উদ্ধার করা অর্ধগলিত লাশের পরিচয় মিলেছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ঘাতক ট্রাক চালক প্রেমিককে। হত্যাকাণ্ডের শিকার রেহেনা পারভীন (৩৭) চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ইছাপুর এলাকার প্রবাসী সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। হত্যায় জড়িত ঘাতক ট্রাকচালক আবুল খায়ের (৪৯) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সোনারগাঁও রাস্তার মাথা এলাকার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘাগড়া থেকে লাশ উদ্ধারের পরপরই আমরা ঘটনার তদন্তে নেমে পড়ি। অবশেষে মৃতদেহে মোড়ানো মাফলার ও পারিবারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘাতক ট্রাকচালক আবুল খায়েরকে শুক্রবার রাতে আটক করতে সক্ষম হই। পরে থানা পুলিশের একটি টিম রাত সাড়ে দশটায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর এলাকা থেকে আবুল খায়েরকে কাউখালী থানায় নিয়ে আসে।’
ওসি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের শিকার রেহেনার ছেলে মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় গ্রেফতার আবুল খায়েরকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া এলাকা থেকে অর্ধগলিত অজ্ঞাত পরিচয়ের এই নারীর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ঘাগড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রায় দুইশ’ গজ পশ্চিমে এই লাশটি পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। পরে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে আসা এক সন্তান মৃতদেহটি তার মায়ের বলে শনাক্ত করে।
হত্যারকারী আবুল খায়েরের বরাত দিয়ে থানা পুলিশ জানিয়েছে, হত্যার শিকার রেহেনা পারভীনের সঙ্গে তার প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে গত ৮ বছর ধরে যোগাযোগ নেই। এই নারীর ছেলে কিছুদিন ট্রাকের হেলপার হিসেবে ছিলেন। সেই সুবাদে রেহেনার সঙ্গে ট্রাকচালক পারভীনের পারিবারিকভাবে সখ্যতা গড়ে উঠে। পরবর্তীতে অনেক বছর তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। স্বামী প্রবাসে থাকা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার সুবাধে তাদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতো আবুল খায়ের। এছাড়া পরিবারের ঘরভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ বহন করত আবুল খায়ের।
এরমধ্যে বেশ কয়েকবার রেহেনার বাসায় গিয়ে অন্য পুরুষের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না আবুল খায়ের। এ কারণে সে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে ট্রাকযোগে কয়লা নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার মগাছড়ির ইটের ভাটাতে আসার সময় রেহেনা পারভীনকে ফোন করে টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নেয়। রেহেনা পারভীন তার ফোন পেয়ে ঘর থেকে বেরি হয়ে এলে, তাকে ট্রাকের কেবিনে রাঙামাটির পর্যটন রিসোর্টে নিয়ে যাবে বলে। রাতে পথিমধ্যে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এসে ট্রাক থামিয়ে রেহেনা পারভীনকে মাফলার দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ট্রাকে থাকা কাপড় দিয়ে ঢেকে কেবিনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। পরে রাত সাড়ে দশটায় ঢাকা থেকে নিয়ে আসা কয়লা ইটের ভাটায় আনলোড করে গভীর রাতে ঘাগড়ার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রায় ২০০ গজ পশ্চিমে লাশটি ফেলে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিকাশের টাকা তুলে মেয়ের ওষুধ আনতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার দুপুরে অর্ধগলিত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করা হয় রেহেনা পারভীনের। তার গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার ইছাপুরে হলেও দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন আতুরার ডিপোর হাশেম বাজার এলাকায় মসজিদসংলগ্ন ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন রেহেনা পারভীন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহতের ছেলে মাহমুদুল হাসান রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে এসে তার মায়ের লাশ শনাক্ত করেন এবং ঘটনার বিস্তারিত জানান। এরই মধ্য দিয়েই বের হয়ে আসে পরিকল্পিত এই হত্যার রহস্য।