‘ভ্যাকসিন নিয়ে যেন মানুষের মধ্যে বঞ্চনার অনুভূতি তৈরি না হয়’
৯ জানুয়ারি ২০২১ ২১:১২
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমএসএসইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেছেন, ভ্যাকসিন কার্যক্রমে সাফল্য নির্ভর করে এর গ্রহণযোগ্যতার উপরে। যদি আস্থার জায়গাটা দুর্বল হয়, তাহলে এই কর্মকাণ্ড ঠিকমতো চালানো সম্ভব হবে না। ভ্যাকসিন কারা পাবে, এই প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো না দিলে সমাজে অস্থিরতা ও বঞ্চনার অনুভূতি তৈরি হবে। যত স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রক্রিয়াটি হবে, মানুষের সঙ্গে বার বার আলাপ করে হবে, তাতে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মধ্যে যেন বঞ্চনার অনুভূতি বা বিভক্তি তৈরি না হয়।
শনিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে তোপখানা রোডে বিএমএ মিলনায়তনে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের ‘বিএইচআরএফ সংলাপ কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন কোনো ভ্যাকসিন কেনার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছিল সে সময়ের চেয়ে এখন অপশন অনেক বেড়েছে। একটি উৎস থেকে যে তিন কোটি ডোজ সংগ্রহ করছি, এর পাশাপাশি আরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসবে, তখন বিকল্প উৎস খোঁজার জন্য অন্যান্য বিষয়গুলোও বিবেচনা করতে হবে। আমাদের দেশে ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রথমে দেড় কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সত্যিকারের ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের দেওয়া হবে, ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষকে সেবা-সহায়তার জন্য যারা কাজ করছেন, তাদের দেওয়া হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে যাদের কম ঝুঁকি তাদের দেওয়া হবে। কোন দেড় কোটি মানুষকে দেওয়া হবে, তা কতটা বিজ্ঞান ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং আমাদের দেশের প্রত্যাশার সঙ্গে মেলে— এভাবে যদি না ঘটে তাহলে মানুষের আস্থা কমে যাবে। সেটি দ্বিতীয় পর্যায়ের ভ্যাকসিনের সময় প্রভাব ফেলবে।’
তিনি বলেন, ‘টিকা কার্যক্রমের সফলতা নির্ভর করে স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার ওপর। যত স্বচ্ছতার সঙ্গে এ প্রক্রিয়াটি হবে, মানুষের সঙ্গে বারবার আলাপ করে হবে, আর তাতে গ্রহণযোগ্য পাবে। যদি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা নড়বড়ে হয়ে যায় তাহলে টিকা কার্যক্রম সফল হবে না। টিকা কারা পাবে এই প্রশ্নের উত্তর ঠিকভাবে না দিলে সমাজে অস্থিরতা ও বঞ্চনার অনুভূতি তৈরি হবে।’
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘স্বচ্ছতার উপরে নির্ভর করে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সফলতা। প্রক্রিয়াটি যত স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে ও বার বার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে হবে, তাতে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। ভ্যাকসিন বিতরণের সময় যেন সমাজে বিভেদ সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভ্যাকসিন কারা পাবে, এই প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো না দিলে সমাজে একটি অস্থিরতা, বঞ্চনার অনুভূতি তৈরি হবে। ভ্যাকসিন কারা পাবে, সেটা যদি যৌক্তিকভাবে বা বিজ্ঞানসম্মতভাবে নির্ধারণ করা না হয় এবং সে সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়াও জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিনের কার্যক্রমে সাফল্য নির্ভর করে এর গ্রহণযোগ্যতার উপরে। যদি আস্থার জায়গাটা দুর্বল হয়, তাহলে এই কর্মকাণ্ড ঠিকমতো চালানো সম্ভব হবে না। পশ্চিমা দুনিয়ায় প্রায় অর্ধেক মানুষ ভ্যাকসিন নিচ্ছে না। বাংলাদেশে যদি এটা ঘটে, তাহলে কী হবে? কোনো একজন মানুষ যদি ভ্যাকসিন নিতে না চায় তাহলে ওই বাড়ি, বাসায়, অ্যাপার্টমেন্টে, কমিউনিটিতে কেবল তিনি নন, অন্যরাও ঝুঁকিতে থাকবে। এই ঝুঁকির মাধ্যমে ভ্যাকসিনেশনের সুবিধাটাই কমিয়ে দিচ্ছেন।’
আমাদের ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে হবে, গবেষণা এবং স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবনের সম্ভাবনাও বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বিএমএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল।
আলোচনা সভায় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
ডা. সায়েদুর রহমান বঞ্চনার অনুভূতি বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম বিএমএসএসইউ ভ্যাকসিন