পিঠা বিক্রির টাকায় চলবে সারাবছরের পড়ালেখা
১০ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:৪৭
রংপুর: অনেকের জন্য কষ্টের হলেও উত্তর জনপদের ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু শৈত্য প্রবাহ আশীর্বাদ হয়ে আসে মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীদের জন্য। শীতে পথেঘাটে পিঠা বিক্রির টাকায় চলে সারা বছরের লেখাপড়ার খরচ। আবার কারও কারও স্বপ্ন গরিব বাবার হাতে তুলে দেবেন সংসার খরচের টাকা।
তেমনই পিঠা বিক্রি করে দু’পয়সা রোজগারের জন্য কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থেকে রংপুরে এসেছেন দশম শ্রেণি পড়ুয়া হারুন-অর-রশিদ। পিঠা বিক্রির অর্থ দিয়ে এ বছর এসএসসির ফরম পূরণ করে সারাবছর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান তিনি।
মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ী হারুনসহ তার ১৬ সহপাঠী পিঠা বিক্রির উদ্দেশে রংপুর এসেছে ডিসেম্বরের শুরুতে। নগরীর কামারপাড়া বাসস্টান্ড এলাকায় একটি আধাপাকা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে তারা। দিনভর আটা, নারিকেল আর গুড় ভেঙে কোমল হাতে প্রস্তুত হয় শীতের অন্যতম অনুসঙ্গ ভাপা পিঠার উপকরণ।
হাড়কাঁপা এ শীতে মানুষের মুখে ভাপা পিঠার স্বাদের বিনিময়ে দু’পয়সা রোজগারের জন্য সূর্য ডোবার আগেই বেরিয়ে পড়েন হারুন ও তার বন্ধুরা। হারুন পিঠা বিক্রি করেন রংপুর স্টেশন এলাকার ইস্পাহানি ক্যাম্প এলাকায়।
হারুন বলেন, বাবা-মা অর্থের অভাবে পড়ালেখা করাতে পারে না। এখান থেকে কিছু টাকা আয় করতে পারলে বাড়িতে বাবা-মার কাছে পাঠাবো। কিছু রেখে দিবো, তা দিয়ে এ বছরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করে সারাবছর পড়ালেখার খরচ চালাবো।
নগরবাসী পিঠার স্বাদ নিতে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় জমায় তরুণদের ভাসমান এসব পিঠার দোকানে। পিঠা খেতে আসা রাহাত আসরার হোসেন বলেন, শীতের শুরুতে ভাসমান মৌসুমি পিঠা ব্যবসায়ীরা ভাবা পিঠার পসরা নিয়ে বসে বিধায় এখন বাসা-বাড়িতে তৈরি করে খাওয়া হয় না। তাই এখান থেকেই কিনে খাই।
শাকিল মাহমুদ নামে একজন বলেন, পরিবার পরিজন ছাড়া যারা এই শহরে থাকেন, ভাসমান মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কল্যাণে তাদের পিঠা খাওয়ার সৌভাগ্য হয়।
হারুন আরও জানান, তার বাবা পেশায় একজন রাজমিস্ত্রীর সহায়ক। ৩ ভাই ২ বোনের মধ্যে হারুন সবার বড়। তার স্বপ্ন এসএসসি পাশের পর ডিপ্লোমা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়ে প্রকৌশলী হওয়া। এরপর বাবাকে হাড়ভাঙা খাটুনি থেকে মুক্তি দেওয়া।
বিক্রি করা পিঠার টাকায় স্বপ্নের মতো করে ভবিষ্যৎ সাজাতে খেলাধুলার বয়সে দুঃখের পাহাড় জয়ের স্বপ্ন দেখছে হারুনসহ তার স্কুল ও এলাকার বন্ধুরা। ফেব্রুয়ারির শুরুতে পিঠা বিক্রির টাকা নিয়ে আলোকিত আগামী গড়ার প্রত্যয়ে বাড়ি ফিরবে হারুনরা।