মরদেহ নিয়ে ভোগান্তি!
১১ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৪৫
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে মরদেহ শীতল করার জন্য মরচুয়ারি কুলার নেই। কয়েক বছর ধরে নষ্ট মর্গের এয়ার কন্ডিশনার মেশিনও। মরচুয়ারি কুলার না থাকায় ময়নাতদন্তের আগে ও পরে মরদেহ মেঝেতে রাখা হয়। ফলে মরদেহ বের করার সময় আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
এ ছাড়া সময় মতো ময়নাতদন্ত না হওয়ায় মরদেহ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় স্বজনদের। কোনো কোনো মরদেহে পচন ধরে মর্গের ভেতরেই।
হাসপাতালটিতে বিকেল ৪টার পর কোনো মরদেহ এলে ময়নাতদন্ত হয় পরদিন। আর বৃহস্পতিবার হলে তো কথাই নেই; ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পেতে স্বজনদের অপেক্ষা করতে হয় রোববার পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে মরদেহ ফ্রিজিং করার জন্য মরচুয়ারি কুলার নেই। কয়েক বছর ধরে মর্গের এসিও নষ্ট।
জানা গেছে, প্রতিবছর গড়ে চার শতাধিক মরদেহ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে আসে। নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও পাশের জেলা মুন্সীগঞ্জ থেকে অনেক সময় মরদেহ পাঠায় পুলিশ।
হাসপাতালের রেজিস্টারের তথ্যমতে, ২০২০ সালের অপমৃত্যুজনিত ঘটনায় জানুয়ারি থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে ৪০১টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। হাসপাতালের বহির্বিভাগের ছয় জন চিকিৎসক পর্যায়ক্রমে এ ময়নাতদন্ত করেন।
গত ১৭ ডিসেম্বর ফতুল্লায় সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণে ১২ বছরের শিশু জিসানের মৃত্যু হয়। জিসানের বাবা মামুন জানান, ঐ দিন বেলা ১২টার দিকে জিসানের মরদেহ মর্গে নেওয়া হলেও ময়নাতদন্ত হয় পরদিন। এরপর স্বজনদের কাছে সেটি হস্তান্তর করা হয়।
২১ ডিসেম্বর রূপগঞ্জে পাপিয়া নামে এক তরুণী আত্মহত্যা করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাপিয়ার মরদেহ মর্গে আনা হয়। পরদিন দুপুরে হয় ময়নাতদন্ত। পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় সন্ধ্যায়।
মর্গের ডোম দর্পণ দাস বলেন, ‘আমার কিছু করার নেই। ডাক্তার যখন আসে তখন ময়নাতদন্ত হয়। একটি মরদেহ হলে তা টেবিলে রাখা হয়। বেশি হলে নিচেই কাজ করতে হয়।’
ডোম জানান, বিকেলের পর মরদেহের ময়নাতদন্ত হয় না।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে লাশ এলে বিকেল ৪টার মধ্যে ময়নাতদন্ত করা হয়। ৪টার পর এলে পরের দিন ময়নাতদন্ত হয়। এছাড়া অনেক সময় পুলিশ মরদেহ পাঠালেও সুরতহাল ও চালান কপি পাঠায় না। এ কারণেও দেরি হয়। অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হয়। এ সব লাশ মরদেহের জায়গা নির্ধারণের পর ময়নাতদন্ত হয়। সিটি করপোরেশন থেকে কবরস্থানের অনুমতি পেতে দেরি হলে ময়নাতদন্তও দেরি হয়।’
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মর্গে মরচুয়ারি কুলারের বিশেষ প্রয়োজন জানিয়ে অনেক আগেই কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনও ব্যবস্থা হয়নি।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ মরদেহের সঙ্গে মর্গে সুরতহাল ও চালান পাঠায়। কোথাও আগে-পরে হয়ে থাকলে আমরা সে বিষয়ে জানি না। এ বিষয়টি আরও গুরুত্ব দেবে পুলিশ।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শেখ মোস্তফা আলী বলেন, ‘অজ্ঞাতপরিচয় লাশ দাফনের জন্য আমাদের কাছে আবেদন করে পুলিশ। আবেদনের তিন ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলি কবরস্থানে দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে