Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় সেশনজটের শঙ্কায় চবি শিক্ষার্থীরা


১২ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:১৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ বিস্তার রোধে গত বছর মার্চ মাস থেকে বন্ধ আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হল বন্ধ রেখেই স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অসমাপ্ত পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেশ কয়েকটি বিভাগে অসমাপ্ত পরীক্ষা নিতে শুরুও করেছে। তবে বাকি সেশনগুলোর আটকে থাকা পরীক্ষা নিয়ে সেশনজটের শঙ্কায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের অসমাপ্ত পরীক্ষা প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাদের পরীক্ষা শেষ হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধাপে ধাপে সব বিভাগের বাকি সেশনগুলোর আটকে থাকা অসমাপ্ত পরীক্ষাও নেওয়া হবে। তবে পরীক্ষা চলাকালীন হল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণার আগে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা চলছিল। বেশিরভাগ বিভাগ সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করলেও কিছু বিভাগ পরীক্ষার মাঝামাঝিতে এসে আটকে যায়। আবার অনেকের পরীক্ষা রুটিনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে পরীক্ষা শুরু করতে পারেনি। পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় পরবর্তী বছরের অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকত, পরীক্ষা ও রেজাল্ট হয়ে যেত। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের ক্লাসও হতো। পরীক্ষা আটকে যাওয়াতে তারা স্বাভাবিক এই কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। ফলে দীর্ঘ সেশনজটের শঙ্কায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, রোববার (৩ জানুয়ারি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) প্রথম বর্ষের পরীক্ষা গ্রহণসহ চার দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে প্রক্টরের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে সরে যান শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) পরীক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দেওয়াসহ চার দফা দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— কেবল পরীক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দেওয়া, শাটল ট্রেন চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিউ মার্কেট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু করা, মেসভাড়া সংকট নিরসনে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া এবং করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিভিন্ন বিভাগের স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচ দফা দাবিতে স্মরকলিপিও জমা দেন তারা। শিক্ষার্থীদের কঠোর আন্দোলনের পর রোববার (১৫ নভেম্বর) স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের আটকে থাকা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদ, ছয়টি ইনস্টিটিউট ও ৪৮টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থী আছেন প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ জন। শিক্ষক আছেন ৯২০ জন। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি ‘পুষিয়ে নিতে’ গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। তবে দ্রুতগতির ইন্টারনেট অভাব, ভালোমানের ডিভাইস না থাকায় অর্ধেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না বলেও জানা গেছে।

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আহমেদ জুনায়েদ সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের আইইআর ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে যাত্রা শুরু করছে। এখনো পর্যন্ত একটা ব্যাচ পুরোপুরি মাস্টার্স শেষ করে বের হতে পেরেছে। তার মানে প্রতিটি ব্যাচ গড় হিসাব করলে দুই থেকে আড়াই বছরের সেশনজট। দুই বছর পার করে আমরা এখনো প্রথম বর্ষে। আমাদের ইনস্টিটিউট থেকে বলা হয়েছিল, দ্রুত কোর্স শেষ করতে পালে পরীক্ষা ডিসেম্বরে নেওয়া হবে। তাই নিজেদের চাপ নিয়ে এক বছরের কোর্স ছয় মাসে শেষ করছি। তারপরেও পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। গত বছরের মার্চ মাসে পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘ সেশনজটে পড়তে হচ্ছে।

পালি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের নরেশ চাকমা বলেন, আমাদের তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু করোনার কারণে চারটি কোর্স পরীক্ষা ও ভাইভা বাকি থাকতে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এদিকে তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় চতুর্থ বর্ষের অনলাইন ক্লাসও হচ্ছে না। ফলে আমাদের অনেক পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যদি সদিচ্ছা থাকে, আমাদরও বাকি থাকা পরীক্ষাগুলো দ্রুত শেষ করে দেওয়া সম্ভব।

শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের জি এম মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমরা ২০১৯ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত তৃতীয় বর্ষে আছি। কোর্স শেষ হলেও পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। পরীক্ষা না হওয়ায় পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের অনলাইন ক্লাসও হচ্ছে না। করোনার কারণে আমরা স্বাভাবিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়ছি। ফলে আমাদের দীর্ঘ সেশনজটে পড়তে হচ্ছে। আমাদের একাডেমিক শিক্ষা শেষ করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের যে প্রচেষ্টা, সেখান থেকেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। পাশাপাশি লেখাপড়া থেকে অন্যদিকে ঝুঁকে পড়তেছি। তাই যত দ্রুতসম্ভব সেশনজটমুক্ত করে আমাদের একাডেমিক শিক্ষাবর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মানুযায়ী যে সময়ে শেষ হওয়ার কথা, সেই সময়ে মধ্যে যেন শেষ হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবু নোমান সারাবাংলাকে বলেন, স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের অসমাপ্ত পরীক্ষা প্রাধান্য ছিল। ধারাবাহিকভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অন্যান্য বর্ষের অসমাপ্ত পরীক্ষাগুলোও শুরু হয়ে যাবে। একাডেমিক কমিটি মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেবে। শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমানোর জন্য অনলাইন ক্লাস চলছে। যদি পরিস্থিতি ভালো হয়, আরেকটু ক্লাস নিয়ে তখন খুব বেশি ক্লাসের প্রয়োজন হবে না।

তিনি বলেন, যারা অনলাইন ক্লাসের বাইরে আছে তাদের জন্য শিক্ষকরা বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস-লেকচার আপলোড করে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে হয়তো তাদের জন্য এক্সট্রা ক্লাসও হতে পারে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সেশনজটে পড়বে না বলে মনে করছি। তবে শিক্ষার্থীদের যদি যৌক্তিক দাবি থাকে, যারা অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি তাদের বলতে হবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ ও অনুষদ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের যেটা সুবিধা হয় সেটা অবশ্যই ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের অসমাপ্ত পরীক্ষাগুলো আগে নেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম বর্ষের অসমাপ্ত সব পরীক্ষা নেওয়া হবে। তারপর এগুলোও যখন শেষ হবে, তখন পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগুলো আস্তে আস্তে শুরু হয়ে যাবে। তবে একসঙ্গে সবগুলো পরীক্ষা নেওয়া হবে না। পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে হলগুলো বন্ধ থাকবে। হল খোলা যাবে না।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বিপদসীমার ওপরে পানি, ৪৪ জলকপাট খোলা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৬

তৃতীয় দিনের খেলাও পরিত্যক্ত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৪

সিটিকে সরিয়ে শীর্ষে লিভারপুল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

পদ্মায় কমেছে পানি, থামছে না ভাঙন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৯

সম্পর্কিত খবর