Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিতাসের পাওনা ২ হাজার কোটি টাকা, বিল আদায়ে কঠোর হচ্ছে মন্ত্রণালয়

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ জানুয়ারি ২০২১ ২২:০৪

ঢাকা: শিল্প-বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ গ্রাহকদের কাছে গ্যাসের বিল বাবদ দুই হাজার কোটি টাকার বেশি পাবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। দীর্ঘদিন ধরে যে সকল গ্রাহক বিল পরিশোধ করছেন না তাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। খোদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই এই তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনা জারি করেছে। জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমানের সই করা ওই নির্দেশনায় গ্যাস বিতরণ সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তিন দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি গ্রাহকদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করে তা দ্রুত মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। বকেয়া আদায় এবং বকেয়া পরিশোধ না করলে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের কাজ পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে নিয়মিত মনিটর করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) ও অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এসব বিষয় তদারকি করবেন। আর বকেয়া বিল আদায়ের পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও গ্যাস পাইপলাইন অপসারণও মনিটরিং কমিটি তদারকি করবেন।

সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ খাত, সার কারখানা, ক্যাপটিভ, শিল্পখাত, বাণিজ্যিক, আবাসিক ও মৌসুমি গ্রাহকদের গ্যাস বিতরণ করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। জানা গেছে, এই গ্রাহকদের কাছে গত কয়েক বছরে পাহাড় সমান বিল বকেয়া পড়ে রয়েছে এবং দিন দিন এই বিল বেড়েই চলেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই বিল বকেয়া রাখছে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই বকেয়া আরও বেড়েছে। নানা চেষ্টা করেও বিল আদায় করতে পারছে না তিতাস।

গত অর্থবছরে নতুন করে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি বিল বকেয়া পড়েছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেশি। তিতাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৯৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকার গ্যাস বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর বিপরীতে আদায় করতে পেরেছে ১৫ হাজার ১৮২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক অর্থবছেরই গ্রাহকদের কাছে সংস্থাটির বিল বকেয়া পড়েছে ১ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ সালে তিতাস ১৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকার গ্যাস বিক্রি করে আদায় শেষে বকেয়া ছিল ৫৪৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আগের দুই বছরের বিল আদায়ের তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরে বকেয়ার পরিমাণ বেড়েছে ১ হাজার ২১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। গত অর্থবছরেরসহ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ দুই হাজার কোটি।

বিপুল এই বকেয়া বিল দ্রুত আদায়ে তৎপর হতে গত সেপ্টেম্বরে সুপারিশ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এবার দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা গ্যাসের বিল আদায়ে তৎপর হচ্ছে খোদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। গ্যাসের বিল খেলাপিদের তালিকা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে জানান, সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়ের গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে বিল বকেয়া রেখেছেন। তিতাস নানাভাবে চেষ্টা করেও সেই বিল আদায় করতে পারছে না। এই বিল না পেলে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা মুশকিল হয়ে পড়বে। সেসব চিন্তা থেকেই বিষয়টি মন্ত্রণালয় সরাসরি দেখার উদ্যোগ নিয়েছে।

এদিকে গত ১৫ ডিসেম্বর তিতাস তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, তারা গ্রাহকদের কাছে বর্তমানে ২ হাজার ১৯৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পাবে। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব কোম্পানিকে হালনাগাদ বকেয়ার তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর কীভাবে বকেয়া বিল আদায় করা যাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

জানা যায়, দেশে এখন তিন হাজার মেগাওয়াটের মতো ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। যার পুরোটাই গ্যাস থেকে আসে। অন্যদিকে দেশের শিল্পখাতে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়, তার সিংহভাগই ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ। আর এখাতের মালিকরাই সবচেয়ে বেশি বিল বকেয়া রেখেছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিল পরিশোধের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশ পেয়ে বকেয়া পরিশোধ না করলে গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কর্নফুলী গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি দেশে গ্যাস বিতরণ করে থাকে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

২ হাজার কোটি টাকা গ্যাস বিল তিতাস গ্যাস বকেয়া বিল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর