বছরের শুরুতেই শিক্ষক আন্দোলনের শঙ্কা
১৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৭:৫৪
ঢাকা: গেল বছর শিক্ষক নিয়োগ, বেতন গ্রেড বৃদ্ধি, এমপিওসহ বেশকয়েকটি দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন শিক্ষকরা। আন্দোলন হয়েছিল আগের কয়েকটি বছরও। গত দুই বছরে সরকার শিক্ষকদের অনেক দাবি মেনে নেওয়ায় এসব আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত হয়ে পড়ে। তবে নতুন বছরে নতুন দাবিতে ফের দেখা দিয়েছে শিক্ষক আন্দোলনের শঙ্কা!
এবার ৫০ শতাংশ কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে শিক্ষকদের টাইমস্কেল বহাল রাখাসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতি। দাবি আদায় না হলে আমরণ অনশন করবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সারাবাংলাকে সমিতির মহাসচিব মো. মুনছুর আলী বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চিত করে শিক্ষা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, এটা আমাদের ন্যায্য দাবি। সরকারকে এটা বুঝতে হবে। এটি শিক্ষকদেরদের জীবনমানের পাশাপাশি শিক্ষার মানেরও প্রশ্ন।’
মুনছুর আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং বাস্তবতা অনুধাবন করতেন। এজন্য তিনি স্বাধীনতার পরই যুদ্ধবিদ্ধস্থ বাংলাদেশে শিক্ষকদের জাতীয়করণ করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কর্মরত শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করেছিলেন জাতির পিতা। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও এই বাস্তবতা বুঝতে পারেন। তার কাছে আমাদের দুঃখের কথা বলতে হবে। যারা দায়িত্বে আছেন তারা যদি আমাদের দাবির কথা প্রথানমন্ত্রীর কাছে বলতেন তাহলে আমাদের এত কষ্ট করতে হতো না।’
প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে অবহেলিত শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কর্মরত এক লাখ ৪ হাজার ৭৭২ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করেন। এজন্য শিক্ষক সমাজের হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
তাহলে কেন আন্দোলন?- এমন প্রশ্নে জবাবে এই শিক্ষক নেতা বলেন, ‘শিক্ষকদের (চাকরি শর্তাদি নির্ধারণ) বিধিমালা এসআরও নম্বর ৩১৫ আইন ২০১৩ প্রণয়ন করে গেজেট প্রকাশেরর পর ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে বেতন-ভাতা, টাইম স্কেলসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি শিক্ষকরা পেয়েছেন নিয়মিত। তবে বিধিমালার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় ২০২০ সালের আগস্টে একটি পরিপত্র জারি করে টাইমস্কেল বাতিল করে অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়।’
মুনছুর বলেন, ‘এ কারণে ৫০ হাজার শিক্ষক ও তাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা হুমকির মুখে পড়ে। অর্থমন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ। তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণে জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষকরা জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি ও টাইমস্কেল থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত রকমের অমানবিক সিদ্ধান্ত।’
তাই এই সিদ্ধান্তটি বাতিলসহ তিন দফা দাবি নিয়ে অনশন ও আন্দোলনে নামার হুমকি দিচ্ছেন শিক্ষকরা। এই শিক্ষক নেতা বলেন, ‘শিক্ষক কল্যাণ সমিতি এর আগে তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি সংবাদ সম্মেলন করে সরকারকে জানিয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালের আগস্টে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রটি প্রত্যাহার করে ৫০ শতাংশ কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে টাইমস্কেল বহাল রাখা, ৫০ শতাংশ কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি দেওয়া এবং অধিগ্রহণ করা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসি তৈরি করা প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা।’
২২ জানুয়ারির মধ্যে এসব দাবি আদায় না হলে ২৪ জানুয়ারি দেশের সব জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানান মুনছুর। পরে একই দাবিতে ঢাকায় অবস্থান করে আমরণ অনশন ও বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষক সমিতি।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতেরর মহাপরিচালক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানি। শিক্ষকদের এই দাবির বিষয়ে তারা যদি কথা বলতে চায় আমরা কথা বলতে রাজি আছি। আমরা অবশ্যই তাদের দাবি ন্যয্যতার সঙ্গে বিবেচনা করে দেখব।’ তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, সারাদেশে বর্তমানে ৬৩ হাজার ৬০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৬৭২টি বাদে সবই জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকারি হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তিন লাখেরও বেশি শিক্ষক। আর বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি।
সারাবাংলা/টিএস/পিটিএম
এমপিওভুক্তি বেতন গ্রেড বৃদ্ধি শিক্ষক কল্যাণ সমিতি শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষক-আন্দোলন শিক্ষা অধিদফতর