Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নাকের স্প্রেতে ধ্বংস হবে করোনাভাইরাস: বিআরআইসিএম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:৩৭

ঢাকা: নাক, নাসিকারন্ধ্র, মুখ গহ্বর, শ্বাস ও খাদ্যনালীর মিলনস্থলে অবস্থান করা নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ধ্বংস করতে সক্ষম ‘ন্যাজাল স্প্রে’ উদ্ভাবনের দাবি করেছে বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম)।

প্রতিষ্ঠানটি এই ন্যাজাল স্প্রের নাম দিয়েছে ‘বঙ্গোসেফ ওরো ন্যাজাল স্প্রে’। শুধুমাত্র নন-কোভিড ব্যক্তিই নয়, বরং কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তির ভাইরাল লোডও কমাতে পারে এই ন্যাজাল স্প্রে– এমনটাই দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিজ্ঞাপন

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম এ ধরনের একটি স্প্রে উদ্ভাবন করেছে।

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বিআরআইসিএম এর মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মালা খান।

ড. মালা খান সারাবাংলাকে বলেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধী হিসেবে তারা নাক ও মুখে ব্যবহারের জন্য একটি স্প্রে তৈরি করেছেন। এটি গলা ও নাকে থাকা অবস্থায় কোভিড ভাইরাসকে ধ্বংস করবে। শুধু তাই না, যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত তাদেরকেও যদি সময় মতো এই স্প্রে করা যায় তবে তার ভাইরাল লোড কমে যাবে। এক্ষেত্রে, এই স্প্রে যদি কোভিড আক্রান্ত ও কোভিড আক্রান্ত না এমন দুইজন যদি ব্যবহার করেন তবে, নন-কোভিডের শরীরের সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা কমে যায়।

তিনি বলেন, যারা এখনো আক্রান্ত হন নাই তারাও এই স্প্রে ব্যবহার করতে পারবে। যেমনভাবে মাস্ক ব্যবহার করা হয়েছে সেভাবে এটা ব্যবহার করা যেতে পারে। যাতে কোভিড আক্রান্তদের থেকে ভাইরাস নন-কোভিড ব্যক্তিদের শরীরের সংক্রমিত না হয়। এক্ষেত্রে, যদি কোনো কোভিড আক্রান্তের মাধ্যমে মুখে বা নাকে নন-কোভিড কারো শরীরে ভাইরাস চলে আসে তবে, তিন থেকে চার ঘণ্টা পরপর স্প্রে করার পর ভাইরাস যতটুকু ছিল তা ধ্বংস হয়ে যাবে। স্প্রেটি অনেকটা পর্দার মতো অর্থাৎ প্রিভেন্টিভ হিসেবে কাজ করবে। স্প্রে রেগুলার ব্যবহার করার কারণে প্রাথমিকভাবেই ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যাবে, শরীরের প্রবেশের সুযোগ পাবে না।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) সীমিত পরিসরে ২০০ মানুষের উপরে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, স্প্রে দিয়ে যদি ইরিগেশন করা হয় তবে সঙ্গে সঙ্গেই ভাইরাল লোডটা কমে যাচ্ছে।

স্প্রে’র বাজারজাতকরণের বিষয়ে ড. মালা খান বলেন, এই ধরণের পণ্যে বিএমআরসির অ্যাপ্রুভাল প্রয়োজন হয়। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বিএমআরসিতে আবেদন করা হবে। সেখানে অ্যাপ্রুভাল পেলে ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বাজারে আসবে ওই ন্যাজাল স্প্রে। এক্ষেত্রে, বিআরআইসিআর ও ঢামেক’র ১০ থেকে ১২ জনের একটা দল কাজ করেছে।

তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশই প্রথম মানবদেহে এই সলিউশন পরীক্ষা করেছে। আমাদের পরে ফ্রান্স একটা করেছে, কিন্তু সেটার স্যাম্পল সাইজ মাত্র ৫ জন।

এ দিকে ন্যাজাল স্প্রে দিয়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সারাবাংলা বলেন, এ বিষয়ে মন্তব্য করার আগে পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হবে। এক্ষেত্রে, এর আগে শোনা গিয়েছিল এমন একটি ন্যাজাল স্প্রে দিয়ে কাজ করার বিষয়ে। কিন্তু সেটির উদ্ভাবন প্রথম বাংলাদেশেই হয়েছে এমন কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত জানা নেই। তাই যারা এই ধরণের উদ্ভাবনের দাবি করছে তাদের প্রয়োজন এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে তথ্য প্রকাশ করা। যাতে এসব বিষয়ে অন্যরা মন্তব্য করতে পারে। পুরোটা না জেনে মন্তব্য করা সঠিক হবে না।

এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গোসেফ ওরো ন্যাজাল স্প্রে’র কার্যকারিতার বিষয়টি তুলে ধরে বিআরআইসিএম। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, ইকবালুর রহিম, মো. শফিকুল আজম খাঁন, নিজাম উদ্দিন হাজারী, মো. মোজাফ্ফর হোসেন, শিরীন আহমেদ এবং সেলিমা আহমেদ।

বৈঠকে নিজেদের ন্যাজাল স্প্রে কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর দাবি করে বিআরআইসিএমের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০০ জন কোভিড-১৯ রোগীর ওপর এই স্প্রের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে তা ‘নিরাপদ ও কার্যকর’ প্রমাণিত হয়েছে।

এছাড়াও, বঙ্গোসেফ কোভিড-১৯ রোগীদের ‘ভাইরাল লোড কমিয়ে মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস’ করার পাশাপাশি ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নিয়ন্ত্রণে’ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানিয়েছে বিআরআইসিএম এর গবেষকরা।

বৈঠকে গবেষকরা জানান, তারা যে সলিউশন তৈরি করেছেন তা তিন থেকে চার ঘণ্টা পর পর স্প্রে করা হলে নাক, নাসিকারন্ধ্র, মুখ গহ্বর এবং শ্বাস ও খাদ্যনালীর মিলনস্থলে অবস্থান করা করোনাভাইরাস ধ্বংস হবে। এতে কেউ যদি সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি যায় এবং সংক্রমণ ঘটে, তবে এই স্প্রে ভাইরাস ধ্বংস করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, এই স্প্রেটির বিষয়ে কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। তবে, কমিটির সদস্যরা আরও বড় আকারে এই স্প্রেটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে বলেছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে অনুমোদন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

সারাবাংলা/এসবি/একেএম

কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস ন্যাজাল স্প্রে বঙ্গোসেফ ওরো ন্যাজাল স্প্রে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর