Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনসম্পৃক্ত ‘দৃশ্যমান কর্মসূচি’ নিয়ে মাঠে থাকবে গণফোরাম

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেট
১৩ জানুয়ারি ২০২১ ১১:৩৪

ঢাকা: দল হিসেবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে চায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। সেই লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দলটি। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে সারাদেশে জেলা, উপজেলা থানা ও ইউনিয়ন পর্যায় কমিটি দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করা হবে। পাশাপাশি  মধ্যবর্তী নির্বাচন, জনগণের ভোটাধিকার আদায়, গণতন্ত্র পতিষ্ঠা, দুর্নীতি ও ‘কালো টাকা’মুক্ত সমাজ গড়া এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে দৃশ্যমান কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

বিজ্ঞাপন

গণফোরামের নেতাকর্মীরা বলছেন, জাতীয় রাজনীতিতে গণফোরামের ভূমিকাকে দৃশ্যমান করতে চান তারা। সেক্ষেত্রে জাতীয় ও জনসম্পৃক্ত ইস্যুগুলোতে সরব হবেন। আর মধ্যবর্তী নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে প্রয়োজনে আদালতের আশ্রয় নেবেন দলের প্রধান ড. কামাল হোসেন।

প্রতিষ্ঠাতার ২৭ বছর পর বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার আল্টিমেটামের মধ্য দিয়ে অভ্যন্তরীণ বিভাজন দেখা দিয়েছিল গণফোরামে। গত ৪ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরামের চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। নিজেকে আহ্বায়ক ও আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে সম্পাদক রেখে ওই বিজ্ঞপ্তিতে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। পরে ১২ মার্চ পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করেন তিনি।

ওই সময়ও দলের একাংশের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, অগণতান্ত্রিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ড. কামাল হোসেনকে দুই সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেন। পরে গত ১৭ অক্টোবর এক সভায় দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে আট নেতাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন ড. রেজা কিবরিয়া। এই আট নেতা হলেন— মোস্তফা মোহসীন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিদ, হেলালউদ্দিন, লতিফুল বারী হামিম, খান সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুল হাসিব চৌধুরী।

এরপর মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বে মূলত কেন্দ্রীয় এই নেতাদের অনুসারীদের নিয়েই গণফোরামে বিভক্তি দেখা দেয়। আরেক অংশের নেতৃত্বে ছিলেন ড. রেজা কিবরিয়া। দুই পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি কাউন্সিলও ডাকা হয়েছিল। পরে ড. কামাল হোসেনের হস্তক্ষেপে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়। সে কারণেই দুই অংশের পৃথক কাউন্সিল স্থগিত করে একটি কাউন্সিলের মাধ্যমেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন গণফোরামের দুই অংশের নেতারাই।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, চলতি জানুয়ারিতেই দলের দুই অংশকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণেই সেই কর্মসূচি পেছাচ্ছে। গণফোরাম সূত্র বলছে, দলের মধ্যে সাময়িকভাবে যে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল, তাতে করে নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব কিছুটা বেড়েছিল। সেটা কমিয়ে এনে একযোগে কাজ করার জন্য কিছু সময় লাগতে পারে। তাছাড়া চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক গতিশীলতা ধরে রেখে কাজ করতেও সময় লাগছে। এ কারণে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে কাউন্সিল হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত শুক্রবার মোস্তফা মোহসীন মন্টুর এলিফ্যান্ট রোডের বাসভবনে গণফোরামের কাউন্সিলসহ দলের দৃশ্যমান কর্মসূচি বিষয় নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে ড. কামাল হোসেনকে অবহিতও করা হয়েছে। বৈঠক থেকে দলের সম্মেলন করার জন্য একটি নির্বাহী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। কমিটির প্রধান থাকছেন ড. কামাল হোসেন। এই নির্বাহী কমিটির তৎপরতার ওপর ভিত্তি করে আগামী মে মাসে কাউন্সিল হতে পারে।

দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে সারাদেশে দলটির জেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় কমিটি গঠন করা হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা পর্যায় সফরে বের হবেন। গণফোরামের ৫২টি জেলায় কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। বাকিগুলো আহ্বায়ক কমিটি। তবে এসব কমিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তেমন সক্রিয় নয়। সেগুলোকে সক্রিয় করে সব জেলাতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দেওয়া হবে।

এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু সারাবাংলাকে বলেন, আগামী ১ বছরের মধ্যে গণফোরামকে সুসংগঠিত করা হবে। এর পাশাপাশি সাংগঠনিক যেসব কর্মসূচি আছে তা পালন করা হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, অসাম্প্রদায়িক সমাজ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ভোটাধিকারের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার গঠন করার লক্ষ্যে দৃশ্যমান কর্মসূচি পালন করবে গণফোরাম।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের মতো জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আমরা মাঠে নামব। এছাড়া আগামী ১৪ জানুয়ারি দলীয় কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে কিছু কিছু বিষয় বাস্তবায়ন করতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টিও আলোচনা হবে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

গণফোরাম জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি ড. কামাল হোসেন ড. রেজা কিবরিয়া দৃশ্যমান কর্মসূচি মোহস্তফা মোহসীন মন্টু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর