‘প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ’
১৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:২৬
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে বলেছিলাম, দেশের মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করব। প্রধানমন্ত্রিত্ব আর কিছু না। প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে কাজ করার সুযোগ, কাজ করার ক্ষমতা। তাই মানুষের জন্য কাজ করব। মানুষের সেবা করব।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের কাছে ভাতা হস্তান্তরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি উপকারভোগীদের কাছে পাঠানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি), চাঁদপুর, পিরোজপুর, লালমনিরহাট ও নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং বিআইসিসি প্রান্তে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারীসহ অন্যান্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে দেশের মানুষদের কেউ যেন নিজেকে একেবারে অপাঙক্তেয় মনে না করে। সবার যে একটা অধিকার আছে, প্রত্যেকের প্রতি রাষ্ট্রের যে একটা কর্তব্য আছে সেটাই আমরা করতে চাই।’
এ লক্ষ্যে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, ২০০৭ সালে ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা হয়। আমাকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও আমি বিরোধীদলে ছিলাম। সাধারণত আমাদের দেশে এটা হয় না। সবসময় দেখা যায়, যে ক্ষমতায় থাকে, যারা ক্ষমতায় থাকে তাকেই ধরে। কিন্তু সেবার আমাকেই আগে ধরল। কিন্তু আমি বসে থাকিনি। ওই কারাগারে থেকেই চিন্তা করছিলাম, একদিন না একদিন তো এখান মুক্তি পাব। তখন শুধু দেশের জন্য কাজ করব।’
এক/এগারো সেনা সমর্থিত সরকারের সাব জেলে কারান্তরীণ থাকার সময় ক্ষমতায় এলে জনগণের কল্যাণে কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন তা নোট করে রাখার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
সেই দিন বদলের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনি ইশতেহারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে অন্তত ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত দেশ করে গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করলাম। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। তারা আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে। আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে। যে কারণে সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আর একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে আমরা উন্নয়নটা করতে পাচ্ছি মানুষের জন্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বিদ্যুৎ প্রায় ৯৯ভাগ মানুষের ঘরে পৌঁছে গেছে। মুজিববর্ষে আমরা আমাদের অনেক কর্মসূচি করতে পারিনি। অনেক কর্মসূচি ডিজিটাল পদ্ধতিতে করেছি। যেহেতু জাতির পিতা এদেশের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। কাজেই তার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে এটা আমরা এভাবে পালন করতে চাই যে, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। যারা গৃহহীন-ভূমিহীন তাদের আমরা ঘর দেবো, ভূমি দেবো, প্রত্যেকের একটা ঠিকানা দেবো। একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না। প্রতিটি মানুষের ঘর যেন আলোকিত হয়, বাংলাদেশের মানুষের যেন আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করা। আর সেই কাজ করতে যেয়ে শুধু সরকার একা না, যারা যে যেখানে আছেন, তাদেরও নিজ নিজ কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রত্যেকে আপনারা নিজ নিজ এলাকার আশপাশে কোন মানুষ দরিদ্র্য আছে, কোন মানুষটা গৃহহীন, কোন মানুষটা কষ্টে আছে- আমাদের খবর দিন। খবর পেলে অবশ্যই আমি তাদের জন্য ঘর করে দেবো। তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেবো। আর যাদের সামর্থ্য আছে, আপনারা নিজেরাও করে দেবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিন থেকে একটা লক্ষ্য ছিল, কীভাবে আমরা ভাতাগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবো। আজ দুই কোম্পানির মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। একটা বোধহয় নগদ, আরেকটা বিকাশের মাধ্যমে। এখন থেকে আপনাদের হাতে সরাসরি টাকা চলে যাবে। এই পদ্ধতির ফলে সকলেই উপকৃত হবেন।
দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জনগণের উদ্দেশে বলন, ‘আসুন, মুজিববর্ষে আমরা এটাই আকাঙ্ক্ষা করি যে, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকবে। সুস্থ থাকবে, উন্নত জীবন পাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
নগদ প্রধানমন্ত্রী বিকাশ ভাতা মোবাইল শেখ হাসিনা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী