ঢাকা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা শুধু জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমন করছি তা নয়, পাশাপাশি ডি-রেডিক্যালাইজশনের মাধ্যমে তাদের ভুল পথ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন তাদের ট্রাক্টর, কৃষিজ উপকরণ ও নগদ টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে র্যাব সদর দফতরে জঙ্গি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান ‘নব দিগন্তের পথে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনো জঙ্গিবাদকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্সের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এটা আমরা কখনো বলি না, জঙ্গিবাদকে মূলোৎপাটন করেছি। বলেছি, জঙ্গিবাদকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি অনেক দেশেই গিয়েছি। অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছে, তোমরা কীভাবে জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করছো? বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ কখনো জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না বলেই আমরা সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘একের পর এক যখন জঙ্গি উত্থান ঘটছিল আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের কৃষক, শ্রমিক-শিক্ষকসহ দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে ডাক দিয়েছিলেন ঘুরে দাঁড়াবার জন্য। সবাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানববন্ধন হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। সেই থেকে জনগণ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফরিদ উদ্দিন মাসুদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। যা দেশে-বিদেশে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। সব ধর্মের গুরুদের নিয়ে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘পঞ্চগড়ে হিন্দু ইস্কন মন্দিরে পুরোহিত হত্যা, বৌদ্ধি পুরোহিত হত্যা, শিয়া মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ঈমামকে গুলির দৃশ্য দেখেছিলাম। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে র্যাব এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আজ তারই প্রতিফলন এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিভ্রান্ত হয়েছিল, পথ হারিয়েছিল, যারা ভুল পথে ভুল আদর্শ বুকে নিয়েছিল তারা আজ বাবা-মার কাছে ফিরেছেন। বাবা-মার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন, যা অনেক দিন পর দেখছি। ক্যামেরা বন্দি এ দৃশ্য দেখবে দেশের মানুষ। এজন্য র্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘উন্নয়নের রোল মডেলের সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদ দমনেও বাংলাদেশ রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদকে মূলোৎপাটনে বিশেষ দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। চরমপন্থী বা জলদস্যু যারাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেয়েছে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করেছি।’
র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জঙ্গি আত্মসমর্পণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসার ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, এফবিসিসিআই’র শেখ ফজলে রহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রধান খন্দকার ফারজানা রহমান, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও ইত্তেফাকের সিটি এডিটর আবুল খায়ের।
এর আগে জঙ্গি দমনে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবের সহযোগিতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ফুল দিয়ে আত্মসমর্পণ করে নয় জঙ্গি সদস্য।