Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জাতিসংঘের শরণার্থী আইনে সমর্থন না জানানো লজ্জাকর’


১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:৫০

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা : ‘একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের কয়েক লাখ শরণার্থী ছিল। ওই সময়ে আমরা প্রতিবেশি রাষ্ট্রে শরণার্থীর অধিকার ভোগ করেছি। লজ্জার বিষয় যে স্বাধীনতা লাভের ৪৫ বছরের বেশি সময় পার হয়েছে কিন্তু এখনো বাংলাদেশ জাতিসংঘের শরণার্থী আইনে সমর্থন দেয়নি।’

আঞ্চলিক ফোরাম দক্ষিণ এশীয় মানবাধিকার সংস্থা (এসএএইচআর) সোমবার সকালে ‘রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পর্যবেক্ষণ’ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল এসএএইআর’র চেয়ারপারসন। ওই অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার সারা হোসেন এমন মন্তব্য করেন।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি। এ ছাড়া সংস্থাটিতে রয়েছেন ভারতের প্রতিনিধি ভারত ভূষণ, মালদ্বীপের জিহান মাহমুদ, নেপালের রাজেন্দ্র ঘিমিরি, শ্রীলংকার দিকশিয়া ইলাংগাসিংহে। এরা সকলে সোমবারের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পর্যবেক্ষণ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরার সময় উপস্থিত ছিলেন।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের মতো নিকৃষ্ট কাজ চলমান। যা গণহত্যাকেও হার মানায়। গণহত্যা হলে শরণার্থীর সৃষ্টি হবে। শরণার্থীদের ক্ষেত্রে মিয়ানমার বলছে যে তারা তাদের নাগরিক নয়। আবার বাংলাদেশ রিফ্যুজিদের যে পরিচয়পত্র দিচ্ছে তাতে তাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করছে। এমন পরিস্থিতিতে এই ব্যাপক সংখ্যক মানুষ কিন্তু শরণার্থীর অধিকার পাচ্ছে না।’

সংস্থাটির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল ‘রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পর্যবেক্ষণ’ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তুলে ধরেন। এ সময় তিনি পর্যবেক্ষণের আলোকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সরকার এবং দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলোর কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখেন।

বিজ্ঞাপন

সুলতানা কামাল বলেন, ‘১৯৫১ সালের রিফ্যুজি কনভেনসনকে সমর্থন দিয়ে জাতীয় আইনে তা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। যাতে রিফ্যুজিদের অধিকার নিশ্চিত হয়। রিফ্যুজিদের ক্যাম্পে মৌলবাদী প্রভাব, মানব পাচার রোধ এবং চরমপন্থা প্রভাব এড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।’

তিনি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ত্রাণের বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতা দিতে হবে যাতে রিফ্যুজিরা সম্মান এবং নিরাপত্তার সঙ্গে ফিরতে পারে এবং তাদের অধিকার ফেরত পায়।’

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সুলতানা কামাল বলেন, ‘রিফ্যুজিদের কাছ থেকে জানা গেছে, তারা মিয়ানমারে মৃত্যু, শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণ, জোর করে বাস্তুচ্যুত ও গুম, জমিজমা ও জীবিকার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।’

‘নাগরিক অধিকার এবং সুরক্ষা ও ন্যায়বিচারের নিশ্চিতের শর্তে অধিকাংশ রিফ্যুজি তাদের ভুমিতে ফেরত যেতে চান।’

‘রেশন ও খাদ্য ব্যবস্থার বিষয়ে তারা বলেছেন, আগের মতো অবাধ সরবরাহ তারা পাচ্ছে না। তবে নিয়ন্ত্রিত অবস্থার মধ্যে যথেষ্ট খাদ্য সরবরাহ পাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, অতিরিক্ত খাবার রিফ্যুজিরা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। রিফ্যুজিরা বলেছে, তারা নির্দিষ্ট খাবার পায়। এর বাইরে তাদের চাহিদা যোগানের জন্য অতিরিক্ত খাবার বিক্রি করে তারা সেটার ব্যবস্থা করেন। স্বাস্থ্য কর্মীরা জানিয়েছে, নারী ও শিশুরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।’

‘ক্যাম্পগুলোতে পরিস্কার পানির অভাব রয়েছে। টিউচওয়েলগুলো পায়খানার পাশে খনন করায় একাধিক ক্যাম্পে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।’

বিজ্ঞাপন

‘টয়লেটগুলো অনেক দুরে স্থাপন করায় নারী, শিশু, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য তা ব্যবহারে কষ্টকর হচ্ছে। বিশেষ করে, রাতের বেলায় নিরাপত্তাজনিত কারণে নারীরা দলবদ্ধভাবে টয়লেট ব্যবহার করতে যান।’

‘ক্যাম্পগুলোকে আলো ও বিদ্যুতের ঘাটতি থাকায় নিরাপত্তা সুরক্ষা হুমকিতে। ক্যাম্পের ভেতরে রান্না ও আলোর জন্য কেরোসিন ব্যবহার করা হয়। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং যে কোনো সময় আগুন লাগার মতো বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’

‘ক্যাম্পের ভেতরে গর্ভবতী নারীদের প্রসাবের আগে ও পরের অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ব্যবস্থা নেই। এই বিষয়ে সচেতনতাও নাই। ফলে তাড়াহুড়ো করার প্রবণতা দেখা গেছে।’

‘বিকেল ৫টার পর ক্যাম্পে কোনো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় না। ফলে জরুরি চিকিৎসা সেবার বিষয়টি কষ্টকর।’

‘ধর্ষিত এবং নির্যাতিত নারীদের মধ্যে নিস্তব্ধতা লক্ষ্য করা গেছে। তাদের জন্য কাউন্সেলিং সেবা চালু করা প্রয়োজন।’

‘ক্যাম্পে কোনো স্কুল নেই। বাচ্চাদের কাছে প্রচুর খেলনা সামগ্রী রয়েছে কিন্তু কোনো বই-খাতা দেখা যায়নি।’

‘ক্যাম্পে অবস্থানরত রিফ্যুজিদের কাজ করার কোনো ব্যবস্থা নাই। তাদেরকে সাংগঠনিক বা গঠনমূলক কোনো কাজে যুক্ত করা হয়নি। রিফ্যুজিদের ক্যাম্পের বাইরে যাবার অনুমতি নেই এবং তাদের ক্জা করার কোনো অধিকার নাই।’

‘স্থানীয় শ্রমবাজারে রিফ্যুজিরা ঢুকে পড়েছেন। এতে ৫০০ টাকার শ্রমমুল্য ১০০ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে স্থানীদের মধ্যে এক ধরনের বিদ্বেষ এবং ক্ষোভ কাজ করছে।’

‘ক্যাম্প ও কক্সবাজারের মধ্যে পুলিশ, টেকপোস্ট থাকলেও মানব পাচারের বিষয়টি উদ্বেগজনক।’

‘উখিয়ার হিন্দুপাড়া ক্যাম্পের প্রায় ৫০০ জনের মতো সংখ্যালঘু রিফ্যুজিরা খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এ ক্যাম্পে সাধারণ সুবিধা এবং খাবার ও বাসস্থান জনিত সেবার ক্ষেত্রে খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি।’

‘ত্রাণ ও সেবা দেয়া সংয়স্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।’

পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুলতানা কামাল জানান, উদ্দেশ্য ছিল চলমান বিপর্যস্ত মানবাধিকার অবস্থা, আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া এবং বিভিন্ন উদ্বেগ তুলে ধরা। মিশনের সদস্যরা গত ৭ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুতুপালং, বালুখালি ১ নম্বর ক্যাম্প এবং উখিয়া অঞ্চলের হিন্দুপাড়া গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। এজন্য রিফ্যুজি, স্থানীয় জনগণ, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসন এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলো, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং কক্সবাজার ও ঢাকার বিভিন্ন এনজিওগুলোর প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করে মিশনের সদস্যরা তাদের মতামত জেনেছে।

সারাবাংলা/জেআইএল/একে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গোলমরিচ যেভাবে দ্রুত ওজন কমায়
২০ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:৫১

সম্পর্কিত খবর