করোনায় কুপোকাত বিএনপি, আরেক দফা স্থগিতাদেশ আসছে!
১৫ জানুয়ারি ২০২১ ১২:১৬
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসে একের পর এক নেতার মৃত্যু এবং গণহারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আরও তীব্র হলে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরেক দফা স্থগিতাদেশ আসতে পারে। শনিবার (১৭ জানুয়ারি) স্থায়ী কমিটির ‘সাপ্তাহিক’ বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি।
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়লে চলতি জানুয়ারি ও আগামী ফেব্রুয়ারি— এই দুই মাসের জন্য দলের সব ধরনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ফের স্থগিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চলমান পৌরসভা নির্বাচন পেছানোরও প্রস্তাব করবে তারা। অবশ্য সব কিছু নির্ভর করবে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর।
বাংলাদেশে নোভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর গত বছর ২৩ মার্চ দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করেছিল বিএনপি। এরপর পাঁচ দফায় সেটি ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার আগে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হক, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়ালসহ শাতাধিক নেতা করোনায় প্রাণ হারান।
তারপরও বাস্তবতার নিরীখে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক গতিতে চালিয়ে নেওয়ার মানসে গত বছর ২০ সেপ্টাম্বর থেকে পুনরায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করে বিএনপি। সভা-সমাবেশ, ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি, নির্বাচনি প্রচারণা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে শীর্ষ নেতাদের অংশ গ্রহণ, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ কার্ক্রম, সচেতনামূলক প্রচার-প্রচারণা, মেডিক্যাল ইকুপমেন্ট, মাস্ক-পিপিই বিতরণ, দল- দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধাপর্ণ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সমবেশ অংশগ্রহণ— সব কিছুই চলতে থাকে স্বাভাবিক গতিতে।
এ ধরনের কর্মসূচি পালনের মধ্যেই বিএনপির স্থায়ী কমটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ অসংখ্য কেন্দ্রীয় নেতা করোনায় আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছায়।
করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ৯ ডিসেম্বর মারা যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ৭ টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য, সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র, স্থানীয় বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমজাদ সরকার।
এ ছাড়া চলতি পৌরসভা নির্বাচন বিএনপি মনোনীত অন্তত দুইজন মেয়র প্রার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখনো আক্রান্ত আছেন দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক। চলতি পৌরসভা নির্বাচনে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
এমন বাস্তবতায় দলের সব ধরনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আরেক দফা স্থগিত করার কথা ভাবছে বিএনপি। শীত বাড়ার সাথে সাথে যদি করোনার প্রকোপ বেড়ে যায়, তাহলে আগামী সপ্তাহ থেকেই সাংগঠনি কার্যক্রম স্থগিত করতে পারে তারা। পৌরসভা নির্বাচনও পেছানো প্রস্তাব দিতে পারে তারা। অবশ্য শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচন না পেছায়, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলেও নির্বাচনের মাঠে থাকবে তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার নতুন ‘ধরন’ বৈশ্বিক মহামারি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এটা যদি আরও বেড়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদেরকেও নতুন করে ভাবতে হবে।’
‘তবে এখন পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। আগামী মিটিংয়ে আলোচনা হতে পারে। দেশে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতার দিকে গেলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সারাবাংলা/এজেড/এএম
করোনাভাইরাস করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর