Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুঃসময় ঘিরে ধরেছে কুয়াকাটার তাঁত শিল্পকে

জি এম শান্ত, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:৩৪

বরিশাল: হস্তচালিত তাঁত শিল্পকে বলা হয় সাগরকন্যা কুয়াকাটার অলংকার। তবে শত বছরের এই ঐতিহ্য বিভিন্ন সংকটের কবলে পড়ে এখন ধুঁকছে। এর পেছনে একদিকে রয়েছে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, কাঁচামাল ও উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়া, বাজার সংকট, আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রচালিত তাঁতের বিপরীতে সক্ষমতার ঘাটতি। অন্যদিকে বিপণন ব্যর্থতা, যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের অভাব ও পুঁজি সংকটও সম্ভাবনাময় এই শিল্পটির প্রসারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কুয়াকাটার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রাখাইন পল্লীর নারীরাই মূলত হস্তচালিক তাঁত শিল্পের মূল কারিগর। তাদের মস্তিষ্কপ্রসূত অনন্য নকশা আর হাতের নিপুণ শৈলীর মিশেলে তৈরি তাঁতবস্ত্র একসময় সারাদেশের চাহিদা মেটাত। এখনো সেই চাহিদা কোনো অংশে না কমলেও এর কারিগররা এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাল মেলাতে পারছেন না। সংকটে পড়ে অনেকেই পেশা বদলের চিন্তাও করছেন।

একসময় দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা কুয়াকাটার রাখাইনদের কাছ থেকে কাপড় কিনতেন। সাগরকন্যার পর্যটনশিল্প জনপ্রিয়তা পেলে স্থানীয় মহিলা মার্কেটসহ বিভিন্ন দোকান থেকে তাঁতবস্ত্র কিনতে শুরু করেন পর্যটকরা। এক দশক আগেও রাখাইন নারীদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল এই তাঁত শিল্প। তবে সেসব সুখের দিন এখন কেবলই স্মৃতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এককালে দম ফেলার ফুরসত পেতেন না রাখাইন পল্লীর তাঁতিরা। দিন-রাত তাঁতের খটখট শব্দে মুখর ছিল উপকূলীয় অঞ্চলের কেরাণীপাড়া, মিশ্রিপাড়া, কালাচাঁনপাড়া, আমখোলাপাড়া, দিয়ারআমখোলা পাড়া, বৌলতলীপাড়া, থঞ্জুপাড়া, লক্ষ্মীপাড়া, মেলাপাড়া, মংথয়পাড়া, নাইউরীপাড়াসহ প্রতিটি রাখাইন পাড়া। তবে এখন আর সেই ব্যস্ততা নেই। কাজের অভাব ও লোকসানের কারণে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানাগুলো। যে গুটিকয়েক কারখানা এখনও কোনোমতে টিকে আছে, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা আর আর্থিক অনটনে সেগুলোরও এখন নিভু নিভু দশা।

থঞ্জুপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানায় কাজ করছেন মাত্র একজন রাখাইন নারী। একটি তাঁতে কাজ করছেন তিনি। অলস পড়ে আছে আরও কয়েকটি তাঁত। মাচান রাখাইন নামে ওই নারী জানালেন, কাঁচামালের দাম আগের তুলনায় অনেকটা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকরাও আগের মতো তাঁতের কাপড় কেনেন না। এসব কারণে পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন কারিগররা।

বিজ্ঞাপন

এ পাড়ার আরেক বয়স্ক নারী মামা রাখাইন বলেন, আগে এক বান্ডিল সুতা কিনতাম ৩০০ টাকায়। সেই সুতার দাম এখন ৫০০ টাকা। নিত্যনতুন ডিজাইনও করতে পারি না প্রশিক্ষণের অভাবে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো উৎপাদন নেই। এভাবে চলতে থাকলে তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।

মিশ্রিপাড়ার তেনোশে রাখাইন আক্ষেপ করে বলেন, এক কেজি সুতায় দু’টি গায়ের চাদর বা ছয়টি মাফলার অথবা চারটি তোয়ালে কিংবা দু’টি শার্টের পিস তৈরি করা যায়। একটি চাদর তৈরিতে সময় লাগে দুই দিন। আর জালি চাদর বুনতে সময় লাগে একদিন। নকশা করা একটি মাফলার তৈরিতে দুই দিন আর নকশা ছাড়া করলে একদিন লাগে। একটি তোয়ালে তৈরিতে প্রায় দুই দিন লাগে। অনেক পরিশ্রম গেলেও এসব পণ্যের একেকটিতে লাভ হয় মাত্র ৫০ থেকে ৮০ টাকা। ফলে কোনোভাবেই পোষায় না।

দিয়ারআমখোলা পাড়ার থ্যাংশে রাখাইন বলেন, চাহিদা অনুযায়ী সুতার অভাব ও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় আমরা চরম আর্থিক সংকটের মুখোমুখি রয়েছি। আধুনিক মেশিনের অভাব ও সর্বোপরি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা না পেয়ে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প এখন মৃতপ্রায়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কুটির শিল্প পটুয়াখালীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জেল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন থেকে রাখাইন তাঁত শিল্পে নিয়োজিত কারিগরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ডিজাইনসহ ঋণ সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্র দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এসব সুবিধার মাধ্যমে তাঁতীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।

সারাবাংলা/এনএস/টিআর

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাঁত শিল্প দুঃসময় রাখাইন পল্লী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর