কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না: সিএমপি কমিশনার
১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:১০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বহিরাগত কিংবা স্থানীয় যারাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা সৃষ্টি করবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। নির্বাচনি সংঘাতে একজন নিহতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, ‘একটি ঘটনা ঘটেছে, আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বিন্দুমাত্র সময় নিইনি। কাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের শক্ত অবস্থান প্রমাণ করব।’
রোববার (১৭ জানুয়ারি) সকালে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনে সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-ওয়েস্টইন্ডিজ ক্রিকেট সিরিজের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিয়ে জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিএমপি কমিশনার।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে সিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা নগরীতে পুলিশি কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে দিয়েছি। পুলিশি টহল, চেকপোস্ট- এগুলো বাড়িয়ে দিয়েছি। যেসব কর্মকাণ্ড আমাদের নির্বাচনকে সহিংস করতে পারে, সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য আমরা আগাম পদক্ষেপ নিয়েছি। যারা ঘোষিত অপরাধী, বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত অথবা অবৈধ অস্ত্রধারী হিসেবে চিহ্নিত, আমরা তাদের নজরদারিতে রেখেছি এবং পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের বার্তা পরিষ্কার- আমরা কাউকেই নির্বাচনী সহিংসতা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে দেব না। আমাদের কার্যক্রম কঠোরভাবেই চলবে।’
বহিরাগতদের এনে চট্টগ্রাম নগরীতে সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি এলাকায় বিশেষ জেলার বাসিন্দাদের আধিক্য থাকতে পারে, এটা এক বিষয়। আবার বহিরাগত অস্ত্রধারীরা এসে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বানচালের চেষ্টা করতে পারে, এটা আরেক বিষয়। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাচ্ছি- কারা আসতে পারে কিংবা কোন জেলা থেকে আসতে পারে সেটা আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রবেশমুখে আমরা চেকপোস্ট বসিয়েছি। আবাসিক হোটেলগুলো আমরা স্পেশাল ড্রাইভও দিচ্ছি। সাময়িকভাবে দুষ্কর্ম করার জন্য কেউ এসে কোথাও আশ্রয় নিয়েছে কি না সেটা আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। অপরাধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে বহিরাগত কেউ এসে চট্টগ্রামে অবস্থান করলে আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করব।’
নির্বাচনি সংঘাতের আশঙ্কা থাকলেও সিএমপির ঠেকানোর প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘আমাদের কোনো ঘাটতি আমরা দেখছি না। সংঘাত তো ঘোষণা দিয়ে হয় না। কেউ তো বলে না যে, আমরা অমুক জায়গায় সংঘাত করব। এটুকু বলতে পারি- পেশাদারিত্বের সাথে আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়েছি। আগামী দিনগুলোতে আমরা নিশ্চয় কাজের অগ্রগতি প্রমাণ করতে পারব।’
‘শহরে আমরা চেকপোস্ট তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। ব্লকরেইড করা হচ্ছে। সবকিছু আমরা করছি, পুলিশি কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে সবার মাঝে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে- আমরা কাউকে ছাড় দেব না। আমাদের কাজ আমাদের কথা বলবে। একটি ঘটনা হয়েছে পাঠানটুলিতে, আমরা পদক্ষেপ নিতে বিন্দুমাত্র সময় নিইনি। কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। কাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের শক্ত অবস্থান প্রমাণ করব। যিনি অপরাধ করবেন, তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করব না। অপরাধ যিনি করবেন, তাকে অবশ্যই দায়দায়িত্ব নিতে হবে, কেউ ছাড় পাবে না।’
‘আমরা কিন্তু নির্বাচনি প্রচারণায় কাউকে নিরুৎসাহিত করছি না। এটা একেবারে উন্মুক্ত আছে’-বলেন সিএমপি কমিশনার।
বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের মাধ্যমে সহিংসতা ঠেকানোর সর্বাত্মক চেষ্টার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২ হাজার ৪৭৭টি বৈধ অস্ত্রের পরিসংখ্যান আমাদের আছে। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেবে যে কবে তারা অস্ত্রগুলো জমা নেবেন। আমরা কোনো পর্যায়ে অস্ত্রের ব্যবহার আশা করছি না। এটা ঠেকাতে আমরা চেকপোস্ট বাড়িয়েছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে সর্বোচ্চ যে, কোনোভাবেই যেন অস্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো ধরনের সংঘাত ছড়িয়ে না পড়ে।’
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো কোনো কেন্দ্রকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি, আবার কিছু কেন্দ্রকে কম ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি। আবার কোনোটাকে স্বাভাবিক মনে করছি। এটা আমরা কেন্দ্রের ভৌগলিক অবস্থান এবং অতীতের সংঘাতের ইতিহাস বিবেচনায় নিয়েই করি। অনেকসময় দেখা যায় খুব সাধারণ একটি ওয়ার্ডও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। সেজন্য আমরা সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের আগমুহূর্তে এটা করব। তবে ওয়ার্ড হিসেবে আমরা ঝুঁকি নির্ধারণ করব না, কেন্দ্রভিত্তিক করব।’
চসিক নির্বাছনে ৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে জানিয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে আমরা একটা গাইডলাইন পাব। পুলিশের কিছু ফোর্স কেন্দ্রভিত্তিক থাকবে। পাশাপাশি আমরা ওয়ার্ড ও থানাভিত্তিক মোবাইল টিম রাখব। ডিবি, কাউন্টার টেরোরিজম টিম, সোয়াত টিম টহলে থাকবে। এরপর কোন কেন্দ্রে কত আনসার থাকবে সেটা নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করবে।’
সার্বিকভাবে চসিক নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এটা অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জের। তবে আমাদের নির্বাচন নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। অবশ্যই আমরা পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করব।’
ক্রিকেট সিরিজ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সভা
সমন্বয় সভা শেষে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও ওয়েস্টইন্ডিজের ক্রিকেট টিম চট্টগ্রামে আসবে। ৮ ফেব্রুয়ারি ফেরত যাবে। এর মধ্যে ওয়ান ডে, টেস্ট ম্যাস এবং ওয়ার্ম আপ প্র্যাকটিসে তারা অংশ নেবেন। তবে চসিক নির্বাচনের দিন কোনো খেলা রাখা হয়নি।
কোভিড এবং চসিক নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই এবারের সিরিজের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যতগুলো ঝুঁকি আছে সবগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করেই পরিকল্পনা সাজিয়েছি। মাঠে কোনো দর্শক থাকবে না। শুধুমাত্র খেলোয়াড়, ম্যাচ অফিসিয়ালস এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা থাকবেন তারা ও সাংবাদিকরা থাকবেন।’
সিএমপি কমিশনার জানান, খেলোয়াড় এবং তাদের সঙ্গে যারা আসবেন তাদের সাতদিন আগে থেকেই কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। কোভিড টেস্ট করা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে তিনফুট দূরত্বের বিষয়টি মেনে চলা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, এস এম মোস্তাক আহমেদ ও শ্যামল কান্তি নাথসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই