বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে গ্লোব বায়োটেকের প্রটোকল জমা
১৭ জানুয়ারি ২০২১ ২০:০৬
ঢাকা: ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ‘বঙ্গভ্যাক্সে’র প্রটোকল জমা দিয়েছে গ্লোব বায়োটেক। বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) ইথিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের জন্য এই আবেদন জমা দেয় দেশিয় প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে বিএমআরসি’তে প্রটোকল জমা দেওয়ার বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন গ্লোব বায়োটেকের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্লোব বায়োটেকের পক্ষে তাদের সিআরও (ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন) এ প্রটোকল জমা দেয়। গ্লোব বায়োটেকের পক্ষে সিআরও লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাজটি করবে। আর অনুমোদন হলে একটি সরকারি হাসপাতালে এই ট্রায়াল দেওয়া হবে।’
এদিন গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ ও গ্লোব বায়োটেকের কর্মকর্তারা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএমআরসিতে আসেন। পরবর্তীতে তারা ভ্যাকসিনের পুরো প্রটোকলসহ প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার আবেদন জমা দেন বিএমআরসিতে।
২০টি ফাইলে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রটোকল জমা দেওয়া হয়েছে বিএমআরসিতে। এ আবেদনে একসঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রায়ালের অনুমোদন চাওয়া হয়। এ সময় বিএমআরসির পক্ষে একজন সহকারী পরিচালক সিআরও’র আবেদন গ্রহণ করেন।
মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের এই গবেষণায় কাজ করবেন ৫৭ জনের একটি দল। যার প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব জানান, অনুমোদন পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই ট্রায়াল শুরু করতে পারবেন তারা। শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকের ওপর এটা প্রয়োগের পরিকল্পনা তাদের।
উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্লোব বায়োটেক প্রথম জানায়, তারা দেশেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে জন্য কাজ করছে। ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরই তারা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কাজ শুরু করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ২০১৫ সালে ক্যানসার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজসহ অন্যান্য দুরারোগ্য রোগ নিরাময়ের জন্য বায়োলজিক্স, নভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার উৎপাদনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে গ্লোব বায়োটেক গবেষণার পাশাপাশি কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা ও ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করে। সিইও ড. কাকন নাগ ও সিওও ড. নাজনীন সুলতানার সার্বিক তত্ত্বাবধানে তারা ‘কোভিড-১৯’ প্রতিরোধে টিকা (ভ্যাকসিন) আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে।
২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব ঘোষণা দেয়, প্রাণিদেহের ওপর এই ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের ট্রায়াল তারা সফলভাবে শেষ করেছে। পরবর্তী ধাপগুলো ঠিকঠাকমতো শেষ করতে পারলে ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে তারা টিকা বিপণন করতে পারবে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে গ্লোব বায়োটেকের ডা. আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে ভ্যাকসিনের সাফল্যের কথা আমরা গণমাধ্যমে বলেছিলাম। ওই ট্রায়ালের সাফল্যের পর আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল করছি। প্রাণিদেহের ওপর এই পর্বের ট্রায়ালও প্রায় শেষ। এখন ডেটা কালেকশন চলছে। ডাটা কালেকশন শেষ হলে সেটি বিশ্লেষণ করে আমরা আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য আবেদন করবো বিএমআরসির কাছে। অনুমতি পেলে আমরা ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিআরও) মাধ্যমে ট্রায়াল শুরু করব।’
এরপর ১ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) বিভাগের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ সারাবাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, তারা তাদের ভ্যাকসিনের নাম দিয়েছেন ‘ব্যানকোভিড’, যা মূলত ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টস এম-আরএনএভিত্তিক ভ্যাকসিন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এই ঘরানার মধ্যে ‘ব্যানকোভিড’ই প্রথম ভ্যাকসিন। আর এটিই প্রাণীদেহে দ্বিতীয় ধাপে প্রয়োগ করে সাফল্য মিলেছে। কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি পরিচালিত ‘বায়ো আর্কাইভ’ সার্ভারে তাদের এ সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধ ছাপা হয়েছে।
পরবর্তীতে ৫ অক্টোবর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকা ‘ব্যানকোভিড’ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সিইও ড. কাকন নাগ। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে অ্যানিমেল মডেল ইঁদুরে নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ণাঙ্গ প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যানকোভিড সম্পর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যার বিস্তারিত ফলাফল বায়ো-আর্কাইভে (biorxiv) প্রি-প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।’
১৪ অক্টোবর মানবদেহে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘ব্যানকোভিড’ ট্রায়ালের জন্য দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের সঙ্গে আইসিডিডিআরবি এক সমঝোতা স্মারক সই করে। ওই সময় আইসিডিডিআরবি’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আলম জানিয়েছিলেন, গ্লোব বায়োটেকের এই টিকা তিন হাজার মানুষের ওপর ট্রায়াল দেওয়া হবে। তবে তখন ঠিক কবে নাগাদ ট্রায়াল শুরু হবে এমন প্রশ্নে নির্দিষ্ট কোনো সময় বলতে পারেনি গ্লোব বায়োটেক।
১৭ অক্টোবর দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘ব্যানকোভিড’কে তালিকাভুক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির তালিকায় গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কৃত তিনটি ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ১ ডিসেম্বর আইসিডিডিআর,বি’র অনাগ্রহের অভিযোগ তুলে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে গ্লোব, জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ।
সর্বশেষ ২৮ ডিসেম্বর গ্লোব বায়োটেককে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়।
সারাবাংলা/এসবি/এমও