Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিলিস্তিনে নির্বাচন নিয়ে দ্বিধা-বিভক্তি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৭ জানুয়ারি ২০২১ ২১:০৭

দেড় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় ফিলিস্তিনের জাতীয় নির্বাচন আদৌ হবে কিনা, হলেও তা কোনো পরিবর্তন নিয়ে আসবে কিনা তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক দ্বিধা-বিভক্তি কাজ করছে। খবর রয়টার্স।

পাশাপাশি, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং বিচ্ছিন্ন তিনটি অঞ্চল আর নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবিশ্বাসতো রয়েছেই।

এর আগে, শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মধ্যে চলে আসা বিভক্তি কমিয়ে আনতে চলতি বছরের মে মাসে ফিলিস্তিনের পার্লামেন্ট নির্বাচন এবং জুলাইতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। তার প্রধান প্রতিপক্ষ ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসও এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে।

আব্বাস বলেছেন, ২২ মে পার্লামেন্ট এবং ৩১ জুলাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০০৫ সালে হওয়ার সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আব্বাস জিতেছিলেন, তার আনুষ্ঠানিক মেয়াদ ছিল ৪ বছর। নির্বাচন না হওয়ায় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও এক যুগ ধরে তিনি একই দায়িত্বে আছেন।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আব্বাসের ওই ঘোষণাকে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে খুশি করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছে যাওয়ার পর ফিলিস্তিনিরা এখন বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব জোরদারের চেষ্টা করছে। তবে, আব্বাসের ওই ঘোষণা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে খুব একটা উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে না – জানিয়েছে রয়টার্স।

এ ব্যপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজার এক অধিবাসী রয়টার্সকে জানিয়েছেন – নির্বাচন বাতিলের জন্য হাজারও কারণ খুঁজে পাবে তারা। ইসরায়েল, বিদ্রোহী গোষ্ঠী, ক্ষমতা ভাগাভাগি, কতকিছু। তিনি কোনো আশা দেখছেন না।

ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের ডিসেম্বরের এক জরিপে অংশ নেওয়া ৫২ শতাংশ ফিলিস্তিনি মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো নির্বাচন হলে তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচনে যদি হামাস জেতে, তাহলে আব্বাসের দল ফাতাহ ফল মেনে নেবে না – বলে মনে করেন ৭৬ শতাংশ ফিলিস্তিনি। আবার, ফাতাহর জয় হামাস প্রত্যাখ্যান করবে – এমনটা বিশ্বাস করেন ৫৮ শতাংশ।

এ ব্যাপারে পশ্চিম তীরের বর্ষীয়ান রাজনৈতিক বিশ্লেষক হানি আল-মাসরি বলেছেন – নির্বাচনের ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কিন্তু এখনও অনেকদূর যেতে হবে। অনেক বাধা আছে, সেসব বাধা টপকাতে না পারলে এই পুরো কার্যক্রমই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

ওদিকে, যেসব বাধার কথা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) দুই প্রভাবশালী সংগঠন হামাস ও ফাতাহর মধ্যে বৈরিতাও আছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি পর্যবেক্ষকরা।

এছাড়াও, অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অংশ নিতে দেওয়া হবে কিনা এবং ৮৫ বছর বয়সী অসুস্থ আব্বাস ফের নির্বাচনে দাঁড়াবেন কিনা – এসব প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি।

অন্যদিকে, পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত হামাস কোনো সরকারে থাকলে সেই সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কোনো ধরনের চুক্তিতে যাবে না বলেও আভাস রয়েছে। তবে, ইইউ অবশ্য ফিলিস্তিনে নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে বলেছেন ইইউ’র পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি সংক্রান্ত মুখপাত্র বলেছেন – নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত তারা। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনের সব অঞ্চলে নির্বাচন আয়োজনে সহযোগিতা করতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে ইইউ।

এ ব্যাপারে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের এক মুখপাত্র বলেছেন, গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় সক্ষম হয়ে উঠতে ফিলিস্তিনিদের এ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত জাতিসংঘ। এই নির্বাচন ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

অপরদিকে, আব্বাসের ঘোষণা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পূর্ব জেরুজালেমে নির্বাচন আয়োজনে আগের মতো এবারও ইসরায়েল অনুমতি দেবে কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফিলিস্তিনিরা গাজা ও পশ্চিম তীরের মতো পূর্ব জেরুজালেমেও নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী।

এ প্রসঙ্গে ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান হানা নাসির বলেছেন – তাদের হাতে অন্যান্য বিকল্পও আছে। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জেরুজালেমের বাসিন্দাদের নির্বাচনে অংশ নিতে পারা।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হামাসের নাটকীয় জয়ের পর ফাতাহর সঙ্গে সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটির বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, একপর্যায়ে গৃহযুদ্ধ বেধে যায়। পরের বছরই হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। গাজা এখন হামাসের নিয়ন্ত্রণে। আব্বাসের দলের প্রাধান্য ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে।

এর আগে দুই পক্ষ বেশ কয়েকবার আলোচনা ও বিভিন্ন ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছালেও তাদের মধ্যে বিরোধ পুরোপুরি মেটাতে পারেনি। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ গত দেড় দশকে নির্বাচনের একাধিক তারিখ ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত তারা তাদের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি। বিভিন্ন মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার সংগঠন উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগও করে আসছে।

সারাবাংলা/একেএম

ইসরায়েল গাঁজা জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচন পশ্চিম তীর ফাতাহ ফিলিস্তিন মাহমুদ আব্বাস যুতরাষ্ট্র হামাস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর