Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এপ্রিল-মে’র আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় ঢাকা

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:০৪

ঢাকা: মিয়ানমার সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের মধ্যস্ততায় আগামী ১৯ জানুয়ারি ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু বিষয়ে জোর দেবে ঢাকা। বাংলাদেশ চাচ্ছে, আগামী এপ্রিল-মে’র আগেই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করুক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১৭ ও ২০১৮ সালে জাতিসংঘ অধিবেশনে রাখাইনে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার যে সুপারিশ করেছিলেন, তা বাস্তবায়ন করলেই এই সংকটটের সমাধান হবে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তি, ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং ২০১৮ সালের ১৫-১৬ জানুয়ারি দুই দিনব্যাপী বৈঠকে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত মাঠ পর্যায়ের বিষয় সই করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার এখনও এসব চুক্তির কিছুই মানেনি। মাঝে ২০১৮ সালে চীনের সহায়তায় ত্রি-পক্ষীয় উদ্যোগ এবং বৈঠকও হয়েছে। তাতে রোহিঙ্গা সংকটের কোনো সমাধান আসেনি। তবে আসন্ন ১৯ জানুয়ারির ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক নিয়ে আশাবীদি ঢাকার কূটনীতিকরা।

বিজ্ঞাপন

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার এবং তাদের সেনাবাহিনীর সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট কয়েক যুগ ধরে বয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এই সংকট ইতিবাচক দৃষ্টিতেও পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগামী ১০ বছরের মধ্যে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তাই এই সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।’

গত বছরের ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গা সমস্যা: পশ্চিমা, এশীয় ও দ্বিপক্ষীয় প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ হামিদ আলবার জানান, রোহিঙ্গা সংকট কাটাতে হলে সবার আগে এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট শুধু আঞ্চলিক সমস্যাই নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যাও। এই সংকট শুধু মানবিক সমস্যাই নয়, এটি একইসঙ্গে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সংকটও।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক দশক আগে থেকেই মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বা বৈরী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য উসকানি দিয়ে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ ভদ্রভাবে বন্ধুত্বের আহ্বান জানিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সৎভাব বজায় রাখার চেষ্টা করলেও নেপিডোর সেনা সরকারের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ১৯৯১ সালে মিয়ানমার বাংলাদেশের বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) তিন সদস্যকে হত্যা করেছে, ২০০৮ সালে বাংলাদেশর সমুদ্র সীমায় ঢুকে খনিজ আহরণের চেষ্টা চালিয়েছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার ১৭ বার বাংলাদেশের আকাশ সীমায় অনুমতি না নিয়ে ঢুকেছে এবং ২০১৮ সালে সেন্টমার্টিনকে তাদের বলে মিয়ানমারের মানচিত্রে দেখানোর চেষ্টা করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কথা অনুযায়ী, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র নীতিতে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, এই নীতিতে বিশ্বাস করে। কিন্তু মিয়ানমারের কারণে এই অঞ্চলে অস্থিরতার সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ বসে থাকবে না।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘এই সংকট সমাধানের জন্য দ্বি-পাক্ষিক, আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক ফোরামে আলোচনাসহ হাইব্রিড কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। বৈশ্বিক আদালত আইসিজি এবং আইসিসি যাতে এই সংকট কাটাতে যথাযথভাবে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে পারে, সেজন্য কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ ও ২০১৮ সালে জাতিসংঘ অধিবেশনে রাখাইনে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার যে সুপারিশ করেছিলেন, তা বাস্তবায়ন করলেও এই সংকট সমাধান হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই বছরটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চালু করতে চাই। বছরের শুরুর দিনে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি। বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে মিয়ানমারকে দেওয়া চিঠিতে বলেছি, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে রাখাইনে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করবেন, যাতে রোহিঙ্গারা ফেরত যায়। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া প্রসেসটা এখনও চালু হয়নি। এজন্য পলিটিক্যাল উইল (অঙ্গীকার) দরকার। যেখানে মিয়ানমারের কোনো আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, মিয়ানমার তাদের দেওয়া কথা রাখবে এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চালু হবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে আট লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি সই করলেও নেপিডোর অনাগ্রহের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

সারাবাংলা/জেআইএল/পিটিএম

মিয়ানমার রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর