Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইট-বালু-মাদকের ব্যবসার ‘বাধা সরাতে’ ছাত্রলীগ নেতা খুন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৩৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ছাত্রলীগ কর্মী খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় কথিত যুবলীগ নেতাসহ ‍দু’জনকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। তারা বেশভূষা পরিবর্তন করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, এলাকায় ইট-বালু ও মাদকের ব্যবসা এবং ক্লাবের আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরে আশিকুর রহমান রোহিত নামে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে খুন করা হয়।

গ্রেফতার দু’জন হলো- কথিত যুবলীগ নেতা মো. মহিউদ্দিন (২৯) ও সাইফুল ইসলাম বাবু (২০)।

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোববার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকার মুগদা থেকে মহিউদ্দিন এবং সাইফুলকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মহিউদ্দিনের মুখে দাড়ি ছিল। ঘটনার পর পালিয়ে গিয়ে সে ক্লিন শেভ করে নিজের চেহারায় পরিবর্তন আনে। সাইফুলও বেশভূষা পরিবর্তন করে। তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।’

মৃত আশিকুর রহমান রোহিত (২০) ওমরগনি এমইএস কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গত ৮ জানুয়ারি বিকেলে নগরীর দেওয়ানবাজার ভরাপুকুর পাড়সংলগ্ন কেডিএস গলি এলাকায় ছুরিকাঘাতের শিকার হন রোহিত। ১৫ জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার পরদিন রোহিতের বড়ভাই জাহিদুর রহমান বাদি হয়ে সাহাব উদ্দিন সাবু (২৬), সাইফুল ইসলাম বাবু (২০) ও মো. মহিউদ্দিনকে (২৯) আসামি করে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন বাকলিয়া থানায়। মামলার এজাহারে মাদকবিরোধী পোস্টার ছেঁড়া নিয়ে দ্বন্দ্বে তাকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, মহিউদ্দিন নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে নগরীর চকবাজার থানার দেওয়ান বাজার-ডিসি রোডসহ আশপাশের এলাকায় প্রভাব বিস্তার করত। সাহাবুদ্দিন সাবু ছিল ২০১৯ সালের অক্টোবরে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া কথিত যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনুর অনুসারী। টিনু গ্রেফতারের পর সাবু মহিউদ্দিন গ্রুপে যোগ দেয়।

গ্রেফতার দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি নেজাম জানান, দেওয়ান বাজার-ডিসি রোডসহ আশপাশের এলাকায় ইট-বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত মহিউদ্দিন ও সাবু। ওই এলাকার মা-মনি ক্লাব ব্যবহার করে তারা মাদকের ব্যবসা করত। ওই ক্লাবের সদস্য রোহিত তাদের ব্যবসায় বাধা হয়ে দাঁড়ান। বিভিন্নসময় পুলিশকে খবর দিয়ে এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন রোহিত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাবু রোহিতকে খুন করার প্রস্তাব দেয় মহিউদ্দিনকে। গত ৩১ জানুয়ারি রাতে মা-মনি ক্লাবের পক্ষ থেকে ফুটবল খেলা পরবর্তী ‘পার্টির’ আয়োজন করা হয়। সেখানে মহিউদ্দিন-সাবু-আকবর-সাইফুলরা মিলে রোহিতকে খুনের পরিকল্পনা করে।

বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী সাবু নিজে ছুরি কিনে এনে সাইফুল ও আকবরকে দেয়। ৮ জানুয়ারি পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শহীদুল আলমের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেয় আকবর-সাইফুল ও রোহিত। ফেরার পথে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আকবর ও সাইফুল রোহিতকে অনুরোধ করে মোটরসাইকেলে করে সামনে এগিয়ে দেওয়ার জন্য। রোহিতের মোটরসাইকেলের পেছনে করে দেওয়ান বাজার থেকে ভরাপুকুর পাড় এলাকায় যায়। সেখানে মোটর সাইকেলের গতি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে প্রথমে আকবর ছুরি দিয়ে রোহিতকে দুইবার আঘাত করে। রোহিত দ্রুত নেমে পালিয়ে যাবার সময় সাইফুল তাকে ধাওয়া দিয়ে ধরে আবারও এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।’

হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডকে নির্বাচনি সহিংসতা বলে প্রচার করেছেন। কিন্তু এটি কোনোভাবেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা নয়। পূর্বশত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে একটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

ছাত্রলীগ টপ নিউজ নেতা খুন যুবলীগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর