‘আমরাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী’
১৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে সংরক্ষিত দু’টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের জায়গায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটের মাঠে থাকা বিদ্রোহী দু’জনকে সমর্থন দিয়েছে। তবে শুরুতে সমর্থন পাওয়া দুই কাউন্সিলর প্রার্থী এই পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করে ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রথমে দলের সমর্থন পাওয়া দুই কাউন্সিলর প্রার্থী জহুরা বেগম এবং জিন্নাত আরা বেগম লিপি। তারা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই, আমরাই আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী।’
সোমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সদস্য সচিব আ জ ম নাছির উদ্দীনের স্বাক্ষরিত দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের একটি তালিকা গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়। এতে সংরক্ষিত-৩ (৭ ও ৮ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ড) ওয়ার্ডে জহুরা বেগমের বদলে জেসমিন পারভীন জেসি এবং সংরক্ষিত-৪ (২৮, ২৯ ও ৩৬ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ড) ওয়ার্ডে জিন্নাত আরা বেগম লিপির বদলে ফেরদৌসি আকবরের নাম প্রকাশ করা হয়। এই বিজ্ঞাপন প্রকাশের পরই মূলত দুই নারী কাউন্সিলর প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়টি জানাজানি হয়।
এর মধ্যে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক পূর্বকোণে’ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ হয়, যেখানে জহুরা বেগম ও জিন্নাত আরা বেগম লিপিই দল সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ আছে।
জানতে চাইলে বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘দৈনিক পূর্বকোণে আমার নামে যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি আমার সম্মতিতে দেওয়া হয়নি। এটা জালিয়াতি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের (জহুরা বেগম ও জিন্নাত আরা) বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জহুরা বেগম ও জিন্নাত আরাকে দলীয় প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা অলরেডি আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে চসিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী তালিকায় সংশোধন আনা হয়েছে। এটা আমরা করিনি। আমি এবং আ জ ম নাছির উদ্দীনের স্বাক্ষরিত তালিকায় যাদের নাম আছে, তারাই দলীয় প্রার্থী।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জহুরা ও জিন্নাত বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন কমিটির বিজ্ঞাপনে দুটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী দুজনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে আমরা সংক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। অথচ চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনা অনুযায়ী একাধিক নামের তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচাইবাছাই করে তিনি যাকে যোগ্য মনে করেছেন দলীয় প্রার্থী হিসেবে তার নাম চূড়ান্ত করেছেন।’
তারা বলেন, ‘কিন্তু নির্বাচনের মাত্র সাতদিন আগে দুটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা আত্মঘাতী ও ষড়যন্ত্রমূলক। এই প্রবণতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননা, দলীয় নীতি, বিধিবিধান ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী- যাতে শুধু সংরক্ষিত ওয়ার্ড নয়, মেয়র ও কাউন্সিলর পদেও বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা দলের নিবেদিতপ্রাণ আদর্শিক কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রতিনিধি হতে আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে আসছি এবং ভোটারদের মন জয় করতে সমর্থ হয়েছি। সর্বোপরি কেন্দ্র থেকে প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের বিজয় নিশ্চিত করতে সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু আকস্মিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নামে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে বিদ্রোহী প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণায় শস্যের ভেতরে ভূতের বসবাসের আভাস পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলীয় হাইকমান্ড বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পরও তাদের দুজনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দল ও সরকারের বিরুদ্ধে একটি অশনিসংকেত।’
ভোটারদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করেছেন জহুরা বেগম ও জিন্নাত আরা। এই কর্মকাণ্ডকে দল ও সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত উল্লেখ করে জড়িতদের চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
দু’জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপ্লব বড়ুয়ার নামে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেবেন না বলে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নগর মহিলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ