সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা: ঝুলে গেছে বিস্ফোরক মামলার বিচার
২০ জানুয়ারি ২০২১ ১০:৫৩
ঢাকা: ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা । ২০ বছর আগের এইদিনে ওই হামলায় পাঁচজন নিহত এবং ২০ জন আহত হন। দীর্ঘ ১৯ বছর পরে সিপিবির হত্যা মামলার কার্যক্রম শেষ হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচার এখনো ঝুলে রয়েছে। দীর্ঘদিন আদালেত সাক্ষী হাজির না হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মামলাটির বিচার কবে নাগাদ শেষ হবে তাও বলতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ।
গতবছরে হত্যা মামলাটির রায়ে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম। বর্তামানে বিস্ফোরক আইনের মামলাটিও একই আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক রবিউল আলম আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী নতুন করে তারিখ ধার্য করেন। বিস্ফোরক আইনের মামলাটিতে এখন পর্যন্ত ১০৬ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৩০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘হত্যা মামলাটির বিচার ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বিস্ফোরক মামলাটিও শেষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু সাক্ষীরা আদালতে ঠিকমত হাজির হন না। সমন দেওয়ার পরও তারা হাজির হন না। সাক্ষীরা আদালতে হাজির হলে এতদিন মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যেত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টায় আছি, যেন যত দ্রুত সম্ভব বিচার শেষ করা যায়।’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ সময়মতো আদালতে সাক্ষী হাজির করতে পারছে না, এটা তাদের ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার কারণেই মামলার বিচার কাজে বিলম্ব হচ্ছে। বিনাবিচারে আসামিরা কারাগারে আছে, যা কষ্টকর ও দুঃখজনক। রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে পারলে এতদিন মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যেত। আশা করছি, রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ নেবেন। রায়ের মাধ্যেমে আসামিরা ন্যায় বিচার পাবেন।’
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাজধানীর পল্টন ময়দানে ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় পাঁ৬চজন নিহত এবং ২০ জন আহত হন। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল।
২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও ২০০৫ সালের আগস্টে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা হয়। এসব ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়ার পর ২০০৫ সালে মামলাটি আবার পুনঃতদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর মামলাটি পুনঃতদন্তের পর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর মৃণাল কান্তি সাহা।
মামলার আসামিরা হলেন- মুফতি আব্দুল হান্নান, মুফতি মাঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মো. মশিউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও নুর ইসলাম। আসামিদের মধ্যে জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের অন্য একটি মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আসামিদের মধ্যে শওকত ওসমান, হান্নান সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ও মাইনউদ্দিন কারাগারে আছেন। অপর আট আসামি পলাতক রয়েছেন।
২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি হত্যা মামলার রায়ে মুফতি মাঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলামকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও মশিউর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়। হত্যা মামলাটি উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
সারাবাংলা/এআই/পিটিএম