Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৯৫ কোটি টাকার প্রকল্পে পরামর্শকেই যাবে ২ কোটি, বিদেশ সফরে ১০ জন

জোসনা জামান,স্টাফ করেসপনডেন্ট
২০ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:২৬

ঢাকা: করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে অর্থ বাঁচাতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন প্রকল্পের অহেতুক অর্থ খরচ কমানোর নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু এসব পরামর্শ ও নির্দেশনা পাশ কাটিয়ে উন্নয় প্রকল্পের আওতায় মাত্রাতিরিক্ত পরামর্শক ব্যয় ও বিদেশ সফরের আয়োজন লেগেই আছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রকল্পে পরামর্শকের জন্য ব্যয় রাখা হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া ১০ কর্মকর্তার বিদেশ সফর বাবদ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৮ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ। এক্ষেত্রে একেকজন কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় হবে ৩ লখ ৮০ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, উচ্চগতির টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ সফর দোষের কিছু না। কিন্তু প্রকল্প করলেই যে বিদেশ সফর করতে হবে এটা ঠিক নয়।’

পরিকল্পা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পাঠনো প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষে করেছে পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে এটি উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।

প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দ্রুতগতি সঞ্চারের জন্য মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট, টেকনাফের সাবরাং ও নাফ এবং মহেশখালীর সোনাদিয়া ট্যুরিজম পার্ক এবং জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে আধুনিক ও উচ্চগতির টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, বৈদেশিক প্রশিক্ষণে আরও বেশি ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল। পিইসি সভার সুপারিশে বলা হয়, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ অনধিক ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে রাজস্ব খাতের অন্যান্য অঙ্গগুলোর ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমাতে হবে। এছাড়া পরামর্শক ব্যয়ও কমাতে হবে। পরামর্শকের জনমাস ও কার্যপরিধি ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংযুক্ত করতে হবে। পিইসির এই সুপারিশ মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তপক্ষ (বেজা) মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট, টেকনাফের সাবরাং ও নাফ ট্যুরিজম এবং জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। পরিকল্পিত শিল্পায়ন, পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে দ্রুত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের প্রাপ্যতা বিনিয়োগ পর্যালোচনায় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্থাপনে সরকারি অর্থায়নে অন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি সেবা দিতে বিটিসিএল প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছে। বেজার চাহিদার জন্য প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে আধুনিক টেলিফোন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরি করা হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে এই প্রকল্পটি ১০১ কোটি ৯০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় এবং ২০২০ সালের জুলাই হতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়ন মেয়াদে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। প্রকল্পের ডিপিপির ওপর ২০২০ সালের ১২ জুলাই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ডিপিপি পুনর্গঠন করেছে। ডিপিপি শেষে প্রকল্পের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯৫ কোটি ১২ লাখ টাকা।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- উচ্চ ক্ষমতার ডেন্স ওয়েভলেন্থ ডিভিশন মাল্টিপ্লেসিং (ডিডব্লিউডিএম) অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন লিংক স্থাপন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ছয় হাজার সংযোগ ক্যাপাসিটির টেলিকম এক্সচেঞ্জ স্থাপন, উচ্চগতির ইন্টারনেটের ব্যাকআপসহ রাউটার, সুইচসহ আইপি ইক্যুইপমেন্ট স্থাপন এবং সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি করে টেলিকম ভবন নির্মাণ।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি সঞ্চারের জন্য মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট, টেকনাফের সাবরাং ও নাফ এবং মহেশখালীর সোনাদিয়া ট্যুরিজম পার্ক এবং জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে আধুনিক ও উচ্চগতির টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন সম্ভব হবে।’

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ পরামর্শক পরিকল্পনা কমিশন বিটিসিএল বিদেশ সফর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর