পদ্মাসেতুর নাম ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেতু’ করার প্রস্তাব সংসদে
২১ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৪২
ঢাকা: পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর নাম ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেতু’ রাখার দাবি জানিয়েছেন সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা। সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ দাবি জানান। এছাড়া সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন আমদানির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্য রুস্তুম আলী ফরাজী।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশন পরিচালিত হয়।
অধিবেশনে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে পদ্মাসেতুর নামকরণের প্রস্তাব করেন মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা সিদ্ধান্তের কারণে পদ্মাসেতু তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তাই সেতুর নাম শেখ হাসিনা সেতু করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু আমাদেরও কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা নেত্রীর ওপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য কাজটি করতে চাই। তাই ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে অনুরোধ— এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হোক।
মো. ইকবালের প্রস্তাবটিকে সমর্থন জানান সরকারি দলের আরেক সদস্য পংকজ দেবনাথ। তিনি বলেন, দুনিয়ার সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মাকে শাসন করে বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে এই সেতু নির্মাণ করা। আমি আবারও দাবি জানাই— এই সেতুর নাম হবে ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা পদ্মাসেতু’। প্রধানমন্ত্রী তার বিনয় দিয়ে হয়তো বারবার বলবেন, ‘না’। কিন্তু আমরা এই প্রজন্মের যারা, তারা অকৃতজ্ঞ নই। আমরা জানি, যখন বিশ্ব ব্যাংক ফান্ড প্রত্যাহার করে নিলো, পদ্মাসেতু বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলো, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা সাহস করে বললেন— নিজের টাকায় পদ্মাসেতু বানাব। তিনি এটা সম্ভব করেছেন মাত্র ১২ বছরে।
এসময় পংকজ দেবনাথ আরও বলেন, আজকের এই করোনা সংকট থেকে বাঁচার উপায় টিকা। সেই টিকা ভারত থেকে বিশেষ বিমানে বাংলাদেশে পৌঁছেছে। অনেক উন্নত দেশ এখনো টিকা পায়নি। সেই টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞ কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অগ্রসরমান। আমরা এখন ৪১তম ধনী দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বই পারে দেশকে এগিয়ে— এটা প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে একটি মহল এখন ষড়যন্ত্র করছে। তারা মানবতা, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার শত্রু। তাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিরোধিতাকারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল এই দেশের জন্য, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। স্বাধীনতার পর তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেই পোড়া মাটির এই দেশে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসেছিলেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্যের জায়গায় পৌঁছেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার কারণেই এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তাই করোনাকালেও আশপাশের কোনো দেশই বাংলাদেশের কাছাকাছি অর্থনৈতিক সাফল্যের জায়গায় নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। কিন্তু তাদের মুখে সেটা মানায় না। তারাই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান ছিল। এই দলটি উন্নয়নে জিরো এবং দুর্নীতিতে হিরো। তাই জন্যগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
করোনা মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে জনগণ তার সুফল পাচ্ছে। কিন্তু এখনো বাকি আছে। ভ্যাকসিন আছে। সেটার যথাযথ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে ভ্যাকসিন আমদানির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
রুস্তম ফরাজী আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন গবেষণার বিষয় যে এত দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি কিভাবে সম্ভব হলো! তবে দেশে বেশকিছু ঝুঁকি আছে। বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকেও সেই কঠোর অবস্থা নিতে হবে। আগে মাদক ছিল না। এখন মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। দুনীতি-মাদক-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করার আহ্বান জানান তিনি।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আব্দুল মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের কারণে বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশ একটি উদাহরণ। করোনা মোকাবিলাতেও তিনি নজরকাড়া সাফল্য দেখিয়েছেন। দেশ সমৃদ্ধির পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। নিজের নির্বাচনি এলাকায় নদী ভাঙন রোধে সরকারের সফল বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরে দ্বিতীয় ফেজের কাজ দ্রুত শুরুর দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ভাষণে এই সরকারের আমলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আদৌও এমপিওভুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। পুরাতন ও জরাজীর্ণ রেলওয়ে জংশনগুলো সংস্কারের কথা বলা হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বগুড়ায় বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছিল। সেটা বাস্তবায়নের পাশাপাশি মসজিদের ইমামদের ভাতা বাড়ানো ও বিদ্যুৎ বিল মওকুফের দাবি জানান তিনি।
সরকারের সাফল্য তুলে ধরে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য খালেদা খানম বলেন, আইনের শাসন নিশ্চিত ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের সফলতা উঠে এসেছে রাষ্ট্রপতির ভাষণে। এই সরকারের আমলে সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, যা দেশকে এগিয়ে নেবে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেতু পদ্মাসেতু শেখ হাসিনা সেতু শেখ হাসিনার নামে নামকরণ সংসদ অধিবেশন