দখলদারদের হামলা, দাঁড়িয়ে থেকে উচ্ছেদ চালালেন মেয়র আতিক
২১ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:৫৫
ঢাকা: দখলদারদের কাছে বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গা উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। দখলদারদের হামলায় সেই অভিযান পণ্ড হতে বসেছিল। একপর্যায়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম উপস্থিত হলেন ঘটনাস্থলে। দখলদাররা তখন আরও মরিয়া। রীতিমতো হামলা করেন বসেন ডিএনসিসি’র অভিযানিক দলের ওপর। কিন্তু মেয়র আতিক ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলেন। দখলদারদের স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, উচ্ছেদ অভিযান চলবেই। শেষ পর্যন্ত সাড়ে ছয় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে শেষ করলেন উচ্ছেদ অভিযান।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) মিরপুর ১১-এর অ্যাভিনিউ ৩-এর ৪ নম্বর রোডে বাজারের ঢাল এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার সময় এমন ঘটনা ঘটে। গত কিছুদিন ধরেই বেদখল জায়গা উদ্ধারে গৃহীত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এদিন এই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
মিরপুরের এই এলাকায় অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-২) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম সফিউল আজম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা অভিযান শুরু করতে গিয়েই পড়েন স্থানীয় দখলদারদের বাধার মুখে। প্রায় আধা ঘণ্টা অভিযান বন্ধ রাখতে হয় তাদের।
এর মধ্যেই পূর্বনির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী অভিযান কার্যক্রম পরিদশর্নে আসেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তাকে দেখে ডিএনসিসি কর্মকর্তারা কিছুটা সাহস পান। ফের উচ্ছেদ শুরু করার উদ্যোগ নেন তারা। কিন্তু এবারে দখলদার ও তাদের সহযোগীরা অভিযান পরিচালনাকারীদের লক্ষ্য করে হামলা করেন। রীতিমতো সংঘর্ষ শুরু হয় এলাকায়। ততক্ষণে মেয়রের ডাকে সাড়া দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পল্লবী থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও থমথমে ভাব দেখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযান বন্ধ রেখে চলে আসতে চান। কিন্তু মেয়র আতিক সেখানে উপস্থিত থেকে দখলদারের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অবৈধ দখলদারদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অভিযান চলবে।
মেয়র অনড় অবস্থান নিলে ১১টার দিকে ফের শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এবার মেয়রের সামনে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহস করেননি দখলদাররা। তারপরও বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে সহায়তা করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
মেয়রের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযানে মিরপুর সেকশন ১১-এর ৪ নম্বর সড়কের দুই পাশে চার শতাধিক স্থায়ী-অস্থায়ী ও ভাসমান স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনোটি টিনের, কোনোটি ইট-সিমেন্টের তৈরি পাকা ঘর। এসব স্থাপনার মধ্যে ছিল দোকানপাট, তোরণ, শেড।
দখলদারদের সামনে মেয়র এমন কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সবখানে এমন কঠোর অবস্থান নিতে পারলে অবৈধ স্থাপনা কেবল নয়, অবৈধ কর্মকাণ্ডও বন্ধ হয়ে যেতে সময় লাগবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, স্থানীয় নেতারাই সিটি করপোরেশনের জায়গা দখল করে লোকজনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে ভাড়া দিয়েছিল। কিছু কিছু জায়গা লাখ লাখ টাকায় বিক্রিও করছিল। কিন্তু আজ যে অভিযান হবে, এটা কেউ জানত না। হঠাৎ দোকানপাট ভাঙার খবর শুনেই নেতারা দৌড়ে এসে ম্যাজিস্ট্রেটসহ সিটি করপোরেশনের লোকজনদের উপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে কর্মকর্তাদেরকে ইট-পাটকেলও মারে দখলদাররা।
আমজাদ আরও বলেন, তবে আজ মেয়রের ডাইরেক্ট অ্যাকশন আমাদের ভালো লেগেছে। উনি এসে যেভাবে বুক চিতিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছেন, তাতেই দখলদাররা আর কিছু করার সাহস পায়নি। দখলদারদের কাছে আতিকুল নামটা যেন একটা আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়, আমরা সেটাই চাই।
অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রায় ৪৯ বছর ধরে বেদখল হয়ে রয়েছে জায়গাগুলো। এত বছর ধরে বেদখল জায়গা উদ্ধার করতে গেলে বাধা তো আসবেই। কিন্তু তাই বলে আতিকুলকে থামিয়ে দেওয়া যাবে না। সে সুযোগ নেই। জনগণই আমার শক্তি। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। দখলদারদের প্রতি আমার একটাই বার্তা— আতিকুলকে বাধা দিয়ে লাভ নেই। আতিকুল থামবে না। দখলদাররা সাবধান।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, দখলদার সে যেই হোক, আমার দলের লোক কিংবা আমার করপোরেশনের লোক কিংবা অন্য কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি— তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। আমি স্পষ্টভাবে বলছি— দখলদার আমার কাছে শুধুই দখলদার। এর আগেও অভিযানের সময় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে ফোন করিয়ে আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও হয়তো অনেকে একই চেষ্টা করবে। তাদের উদ্দেশে আমি স্পষ্ট ভাষায় বলব— আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা না করে দখল করা জায়গা ছেড়ে দিন।
সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর