Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তর্জন-গর্জনই সার, বিভক্তি ‘জিইয়ে রেখে’ই ভোটের মাঠে আ.লীগ

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ জানুয়ারি ২০২১ ১০:৪৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কাউন্সিলর পদে বিরোধ-বিদ্রোহ জিইয়ে রেখেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোটে লড়তে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়া ‘বিদ্রোহী’দের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। কিন্তু নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে এসে এই ‘তর্জন-গর্জন’ অসাড়ই ঠেকছে নেতাকর্মীদের কাছে। এ অবস্থায় নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ডে দল সমর্থিত এবং বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে আছেন। এতে ভোটের মাঠে বাড়ছে সংঘাতের আশঙ্কা। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর ভোটেও বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে, দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেককে মানতে পারেননি নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। বিশেষত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত সাবেক কয়েকজন কাউন্সিলর দলীয় সমর্থনের তালিকা থেকে বাদ পড়া এবং সমর্থনের তালিকায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীদের আধিক্যও সহজভাবে নেননি তারা। শুরুতে এ বিষয়ে নীরব থাকার কৌশল নিলেও করোনায় নির্বাচন ১০ মাস পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে তারা বিদ্রোহীদের পক্ষে প্রায় প্রকাশ্যেই সরব হয়েছেন। কয়েকজন বিদ্রোহীকে জিতিয়ে এনে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আধিপত্য প্রদর্শনের একটি সুযোগ তারা নিতে চান।
এ নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের একাধিক সভায় বাদ-প্রতিবাদও হয়েছে। কিন্তু কার্যত বিরোধ মেটেনি। নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার ভূমিকার কারণে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্তও নেওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় নেতারাও বিরোধ সামলানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বরং হাল ছেড়ে দিয়েছেন— এমন আলোচনাই চলছে নগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
চট্টগ্রাম নগরীর ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে এবার প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর পদে ৫৫ জনকে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জিতে আসা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ১৯ জন এবার সমর্থন পাননি। তাদের মধ্যে ১৮ জনই এবার বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এছাড়া পাঁচটি ওয়ার্ড ছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত অথবা পদ-পদবীতে থাকা ৩-৪ জন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বাদ পড়া গতবারের কাউন্সিলরেরা হলেন— ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে গাজী মো. তৌফিক আজিজ, ২ নম্বর জালালাবাদে শাহেদ ইকবাল বাবু, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে জহুরুল আলম, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলীতে মোরশেদ আক্তার চৌধুরী, ১২ নম্বর সরাইপাড়ায় সাবের আহম্মদ, ১৩ নম্বর পাহাড়তলীতে মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, ১৪ নম্বর লালখানবাজারে এ এফ কবির মানিক, ২৫ নম্বর রামপুরে এস এম এরশাদ উল্লাহ, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদে এইচ এম সোহেল, ২৮ নম্বর পাঠানটুলীতে আব্দুল কাদের, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডে মাজহারুল ইসলাম, ৩১ নম্বর আলকরণে তারেক সোলায়মান সেলিম, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজারে হাসান মুরাদ ও ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গায় জয়নাল আবেদিন।
এদের মধ্যে মোহাম্মদ হোসেন হীরণ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তারেক সোলায়মান সেলিম সম্প্রতি মারা গেছেন। বাকিরা জোরালোভাবেই নির্বাচনের মাঠে আছেন।
২০১৫ সালে জয়ী হওয়া সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলদের মধ্যে যারা বাদ পড়েছেন তারা হলেন— আবিদা আজাদ, আনজুমান আরা বেগম ও ফারহানা জাবেদ। এছাড়া জেসমিন পারভিন ও ফেরদৌসি আকবরকে প্রথমে বাদ দেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে এসে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তাদের সমর্থন দিয়েছেন আওয়ামী লীগ। বাকি তিন জনও আছেন ভোটের মাঠে।
বিদ্রোহীদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী বেশি। এছাড়া শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, সংসদ সদস্য আফছারুল আমিন ও এম এ লতিফ, সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারীরাও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন।
গত বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে যেটি স্থগিত হয়েছে। সেসময় বিদ্রোহীদের থামাতে দফায় দফায় উদ্যোগ নিয়েছিলেন চসিক নির্বাচন সমন্বয়ের দায়িত্ব পাওয়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কিন্তু বিদ্রোহীদের অধিকাংশকেই নির্বাচন থেকে সরাতে না পেরে তাদের ‘নিয়ন্ত্রক’ নেতাদের ইন্ধনকে এজন্য দায়ী করেছিলেন মোশাররফ।
পুনঃতফসিলের পর বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের নানামুখী আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এবং আ জ ম নাছির উদ্দীন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে যাদের নাম ঘোষণা করেছি, তারাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী। এর বাইরে যারা আছেন তাদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।’
পুনঃতফসিল ঘোষণার পর গত ৪ জানুয়ারি নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মকাণ্ড এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া বন্ধের দাবি তোলেন বেশ কয়েকজন নেতা। এসময় তারা নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করারও দাবি করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়— বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।
কিন্তু ১৩ জানুয়ারি কার্যনির্বাহী কমিটির আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রের কাছে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়ন হয়নি। ৮ জানুয়ারি প্রচারণা শুরুর পর থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীরা জোরালোভাবে গণসংযোগে নামেন। ১২ জানুয়ারি রাতে নগরীর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের প্রচারণার সময় দু’পক্ষে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন প্রাণ হারান। গ্রেফতার করা হয় বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরকে, যিনি আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
পরদিন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মকাণ্ড, সংঘাতে একজনের প্রাণহানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাদ-প্রতিবাদ হয়। সভায় মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। সভায় আ জ ম নাছির উদ্দীন পাঠানটুলি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী কাদের তার অনুসারী নন বলে দাবি করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, পাঠানটুলির হত্যাকাণ্ড কোনো ধরনের নির্বাচনি সহিংসতা নয়। এটা নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থে হয়েছে।
ওই সভায় বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আবারও নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান সারাবাংলাকে বলেন, ’১৩ জানুয়ারি সভার পর আমরা বিদ্রোহীদের বিষয়ে লিখিতভাবে কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।’
এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ একাধিকবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে প্রচারণায় এসে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন গত ১৫ জানুয়ারি জানিয়েছিলেন, বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ২০ জানুয়ারি মাহবুবউল আলম হানিফ জানিয়েছেন, বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে দুয়েকদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
কিন্তু প্রকাশ্যে এসব ঘোষণার পরও ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় মাহবুবউল আলম হানিফের এ বিষয়ে এক বক্তব্য নিয়ে নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই সভার প্রধান অতিথি হানিফ কাউন্সিলরদের চিন্তা বাদ দিয়ে সবাইকে নৌকা প্রতীকের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। হানিফের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চুসহ কয়েকজন নেতা নওফেলকে সমর্থন করে সভায় বলেন— হানিফের এই বক্তব্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের শক্তি জোগাবে এবং এতে দলীয় মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। হানিফের অবস্থান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী আখ্যায়িত করে তারা সভায় আপত্তি তোলেন।
দলীয় সভায় হানিফের বক্তব্য ও প্রতিবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু হেসে দেন। প্রসঙ্গ এড়িয়ে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি (মাহবুবউল আলম হানিফ) তো সংসদ সদস্য। আচরণবিধি অনুযায়ী উনি প্রার্থী সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে পারেন না। সংগঠনকে শক্তিশালী করার বিষয়ে উনি কিছু কথা বলেছেন, আমি সেগুলোই শুনেছি।’
একই বিষয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। দলের শৃঙ্খলা আমার কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সেজন্য আমি এ বিষয়ে বলতে চাচ্ছি না। তবে সভানেত্রী শেখ হাসিনার আদেশ আমার কাছে শিরোধার্য। তিনি মেয়র ও কাউন্সিলরদের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমি এর বাইরে যেতে পারি না। নেত্রীর সিদ্ধান্তই যদি না মানি, তাহলে একটি রাজনৈতিক দলে আর থাকে কী? আজ যদি আওয়ামী লীগ আমাকে দল থেকে বের করে দেয়, ঘরের বৌও তো আমার পাশে থাকবে না, নেতাকর্মী-জনগণ দূরের কথা। যারা দল করেন তাদের বিষয়টি স্মরণ রাখা প্রয়োজন।’
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে অপারগতা জানিয়েছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সব বিষয়ে, সবকিছুতে দলীয় শৃঙ্খলা ও সিদ্ধান্তের মধ্যে থাকতে চাই। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটাই চূড়ান্ত। কেউ এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে কোনো বক্তব্য দিলে আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। এ বিষয়ে আমি আমাদের নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ সাহেবকে অনুরোধ করেছি যে সতর্কভাবে মন্তব্য করা প্রয়োজন। দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, এটাকে যদি দু’ভাগ করা হয় তাহলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে।’
কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে ‘লেজেগোবরে’ অবস্থা নিয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।
জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটার জন্য আমাদের ওয়ার্ডভিত্তিক নেতৃত্বের কোনো দায় নেই। এর জন্য কমবেশি আমরাই দায়ী। ব্যর্থতাটা মূলত আমাদেরই।’
কাউন্সিলর পদে সরকারি দলের পরিচয়ে একাধিক প্রার্থী থাকায় অর্ধেকেরও বেশি ওয়ার্ডে সংঘাতের আশঙ্কা করছে নগর পুলিশও। সূত্রমতে, সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ একটি পুলিশ প্রতিবেদনেও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কোন্দল এবং দল সমর্থিত ও ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কার একটি চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। আরেক নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী তুলনামূলকভাবে কম মনোনয়ন পেয়েছে। ২০১৫ সালে জয়ী হওয়া ১৩ জন কাউন্সিলর এবার দলের সমর্থন পাননি। এদের মধ্যে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন হীরণ ছাড়া বাকি ১২ জনই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের একটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৪০টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৮১ জন, যার মধ্যে ১২ জন সদ্যসাবেক কাউন্সিলর। ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পাঁচ জন, যার মধ্যে চার জনই সদ্যসাবেক কাউন্সিলর। আরেকদিকে ৪০টি সাধারণ ওয়ার্ডে বিএনপির বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা পাঁচ জন।
বারবার উদ্যোগ নিয়েও আওয়ামী লীগের অধিকাংশ বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো যায়নি। এর ফলে দলীয় এবং ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে অন্তর্কলহ জোরদার হওয়ায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে প্রভাব পড়ছে। এছাড়া সার্বিকভাবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর