‘সবাইকে ছাড়িয়ে’ শাহাদাতের ৭৫ দফা, গড়তে চান সম্প্রীতির চট্টগ্রাম
২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাঁচ বছর আগে ৫৪ দফা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলম। চট্টগ্রামে আলোচিত ‘দফার রাজনীতিতে’ আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অতীত-বর্তমানের সকল মেয়র প্রার্থীকে ছাড়িয়ে গেছেন এবারের বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। তিনি মোটাদাগে নয় ভাগ করে মোট ৭৫ দফা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর জামালখানে একটি রেস্টুরেন্টে মেয়র প্রার্থী শাহাদাত তার দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে শাহাদাতের প্রধান প্রতিশ্রুতি জলাবদ্ধতা নিরসন।
পাঁচবছর আগে এম মনজুর আলমও জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে চট্টগ্রামকে মুক্ত করাকেই প্রধান অঙ্গীকার ঘোষণা করেছিলেন। এর সঙ্গে শাহাদাত দিয়েছেন সাম্য ও সম্প্রীতির চট্টগ্রাম মহানগরী গড়ার অঙ্গীকার।
‘চলো সবাই বাঁধো জোট এবার দেব আমার ভোট’ শ্লোগানে দেওয়া ইশতেহারে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘রাজনীতি করছি অসহায় আর নিপীড়িত জনতার পাশে থাকতে। কতটুকু পেরেছি, তার বিচারের ভার আপনাদের হাতে।’ রাজনীতিতে নিজেকে নেতা নয় কর্মী মনে করেন উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত বলেন, ‘নির্বাচিত হলে আমি নগরপিতা নয়, নগর সেবক হতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘জনগণকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন। নির্বাচিত হলে সাবেক সকল মেয়রসহ এক্সপার্টদের সঙ্গে নিয়ে সুপারিশক্রমে জলাবদ্ধতা, যানজটমুক্ত, আধুনিক নগরী গড়ে তুলব।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপদ চট্টগ্রাম, সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম, জলাবদ্ধতামুক্ত পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবান্ধব, তথ্য-প্রযুক্তি সমৃদ্ধ নান্দনিক পর্যটন নগরী হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়তে মেয়রপদে ভোট চাই।’
ইশতেহার ঘোষণার সময় শাহাদাতের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবীবুন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ইশতেহারে শাহাদাত জলাবদ্ধতার জন্য অবৈধভাবে পাহাড় কাটা ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন। এতে বলা হয়, জলাবদ্ধতা নিরসনে সব খাল উদ্ধার করে খনন করা হবে পানি চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্ষার আগে প্রতিবছর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাল, নালা-নর্দমা সংস্কারসহ পানি চলাচলের উপযুক্ত করা হবে। ড্রেনেজ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও পাহাড় কাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগকে চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে অবহেলিত বিভাগ উল্লেখ করে শাহাদাতের ইশতেহারে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন পরিচালিত হাসপাতালগুলোর সেবা বাড়ানোর সঙ্গে শয্যাসংখ্যাও বাড়ানো হবে। কোভিড-১৯-সহ সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে।
নির্বাচিত হলে বর্তমান গৃহকরের প্রয়োজনীয় বিন্যাস ও সহনীয় রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শাহাদাত। এছাড়া শিক্ষাবান্ধব নগরী, আবাসন সমস্যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে ইশতেহারে।
পরিচ্ছন্ন চট্টগ্রাম নগরীর গড়ার অঙ্গীকারও করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী। এজন্য সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগে লোকবল বৃদ্ধি, উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজন, সংগ্রহ করা বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে কৃষি কাজে ব্যবহার উপযোগী করা, বহুতল ও আবাসিক এলাকার প্রতিটি ঘর থেকে বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা ইশতেহারে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া নিরাপদ চট্টগ্রাম গড়তে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত, সাম্য-সম্প্রীতির চট্টগ্রাম, নান্দনিক পর্যটন নগর ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইশতেহারে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সুষ্ঠু ভোটের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা প্রত্যাশা করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়া মানে আপনার ভোট কেড়ে নেওয়া। আপনার আত্মীয়স্বজনদের ভোট কেড়ে নেওয়া। অন্তত চট্টগ্রামবাসী যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে সে ব্যাপারে আপনাদের সজাগ থাকতে হবে।’
২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী নৌকা প্রতীকের রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে লড়বেন বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী শাহাদাত হোসেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই