Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো ঢাকার বাকরখানি


১৯ মার্চ ২০১৮ ০৮:৫৪

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা : হালের নতুন নতুন খাবারের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে হারিয়ে যেতে বসেছে পুরনো ঢাকার ঐতিহ্য ‘বাকরখানি’। ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য আর আপ্যায়নের এ অনুসঙ্গটি দিন দিন তার জৌলুস হারাচ্ছে। ফলে নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে না কারখানা, বাড়ছে না কারিগর। যেগুলো আছে সেগুলোতেও বিক্রি কমেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,ঢাকাবাসীর খাবারের মেন্যুতে পরিবর্তন আসছে। সেইসঙ্গে নতুন নতুন রেসিপিও যুক্ত হচ্ছে। এতে করে কদর কমছে বাকরখানির।

উইকিপিডিয়া অনুসারে,বাকরখানির সব চেয়ে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ ইতিহাস হলো জমিদার আগা বাকের তথা আগা বাকির খাঁর নামানুসারে এই রুটির নামকরণ করা হয়েছে। নবাব মুর্শিদ কুলী খাঁর দত্তক ছেলে আগা বাকের। আগা বাকের এবং খনি বেগমের প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র্র করে এই বাকেরখনি/বাকরখানি নামের উৎপত্তি।

মোঘল আমলের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম বাকরখানি রুটি বা বিস্কুট। এই রুটি আফগানিস্তান ও রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় পাওয়া যায়। প্রকৃত বাকরখানি তৈরী করা হয় খাঁটি ময়দা, ঘি, মাওয়ার খামির ও দুধ, চিনি, লবন ইত্যাদি দিয়ে।

বাকরখানি কেজি দরে বিক্রয় করা হয়। প্রতি কেজি রুটির মূল্য ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৩২টি থেকে ৩৫টি বাকরখানিতে এক কেজি হয়। বাকরখানি রুটি খুচরা হিসেবেও বিক্রয় করা হয়ে থাকে। প্রতি পিস দাম পড়বে ৩ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত।

পুরান ঢাকার রাজার দেউরী বাকরখানির দোকানদার মহসিন মিয়া(৪২) সারাবাংলাকে বলেন, প্রায় ১৮ বছর ধরে এই কাজ করে আসছি। আমার দাদা, বাবার পরে আমি এই কাজ করছি। ভবিষ্যতে আমার ছেলে করবে। এই কাজটি আমরা বংশ পরম্পরায় করে আসছি। দোকানের কর্মচারী মফিজুর রহমান বলেন, আমার বড় ভাই ৩৫ বছর ধরে এই কাজ করেছে, এখন আমি করছি।

মহসিন মিয়া আরও বলেন, আগের মতো ব্যবসা নেই। লাভও কমে গেছে। যা বিক্রি হয় তার লাভ দিয়ে দোকান ভাড়া ও কর্মচারীর বেতন দিতেই কষ্ট হয়। ১০০ টাকার বাকরখানি ১৫০ টাকা করে বিক্রি করতে পারলে ভাল হতো।

রাজার দেউরীর আরেক দোকানদার শাহানুর আলম(৪৫) সারাবাংলাকে বলেন, আমি এখানে তিন মাস এসেছি। যা বিক্রি হয় তার লাভ দিয়ে কর্মচারীদের বেতন ও দোকানের ভাড়া দিয়ে আর কিছু থাকে না। বংশাল, নাজিমদ্দিন রোডে আমার আরও কয়েকটি দোকান আছে সেখানে ভালই চলছে। প্রায় ২৫ বছর ধরে আমি এই কাজে জড়িত আছি।

তিনি আরও বলেন. চিনি, ময়দার দাম বাড়াতে আগের মত ব্যবসা নেই। সারাদিনে ৫০ থেকে ৬০ কেজি বাকরখানি বিক্রি করে থাকি। সব খরচ বাদ দিয়ে অল্প কিছু পরিমানে লাভ থাকে তা দিয়ে সংসার চলে।

এক সময় পুরনো ঢাকার বাকরখানির বানানোর দৃশ্য ছিলো চোখে পড়ার মতো। এখন সে দৃশ্য অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। হাতেগোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া বাকরখানির দোকান নেই বললেই চলে। পুরান ঢাকাবাসী ঐতিহ্যের টানে এখনো সকালে চায়ের সাথে বাকরখানি খেয়ে থাকেন। কোনো কোনো দিন ধুমায়িত চায়ের কাপ হাতে হয়তো তারা ফিরে যান মোঘল আমলে, বাকের-খনির প্রেমের স্মৃতি মাখা সুস্বাদু বাকরখনি খেতে খেতে।

সারাবাংলা/এআই/এমএস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর