ঢাকা: বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার দফতরে হামলার অভিযোগে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কর্মরত চার শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
রোববার (২৪ জানুয়ারি) ডিএসসিসি সচিব আকরামুজ্জামানের সই করা এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এছাড়াও, হামলায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে সংস্থার স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি এম এ গনি ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বরখাস্ত হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন অঞ্চল-৫ এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীনে ৫১ ওয়ার্ডে কর্মরত স্কেলভুক্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. হারুন মিয়া, দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী (ট্রাক) মো. আলী মিয়া, অঞ্চল-২ এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধিন কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মী (ট্রাক) মোহাম্মদ আলী সোহরাব ও অঞ্চল-১ এর ১৬ নং ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধিন দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরত শ্রমিক মো. হাসু।
অন্যদিকে, ডিএসসিসি সচিব আকরামুজ্জামানের সই করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচ্ছন্নতা কর্মী এম এ গনি ও মো. আব্দুল লতিফসহ ৩৫-৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ২০ জানুয়ারি আনুমানিক বিকেল তিনটার দিকে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার দফতরে উপস্থিত হয়ে বেতন সংক্রান্ত বিষয়ে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন এবং তাদের ইঙ্গিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. হারুন মিয়া, মো. আলী মিয়া, মোহাম্মদ আলী সোহরাব এবং মো. হাসু প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. আলী হোসেনকে মারধর করেন। যা আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থি। যে কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় ৪ শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তবে, যাদের ইঙ্গিতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেই পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ঘটনার সঙ্গে ৩৫-৪০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী জড়িত রয়েছে বললেও দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরত সাধারণ চারজন কর্মীকে বরখাস্ত করায় বিষয়টি নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মী জানান, দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে তারা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মরত আছি। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে তার বেতন পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ বেতন দেওয়া হবে সেই বিষয়টির খোঁজ নেওয়ার জন্য তারা হিসাব বিভাগে যোগাযোগ করেন। এই অপরাধে তাদের কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
পাশাপাশি, ডিএসসিসিতে মশক নিধন কাজে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরতরা কয়েক মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। ৫ জানুয়ারি তারা করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিবের দফতরের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ করেন।
ওই শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সারাবাংলাকে জানানো হয়, নিয়োগপত্র পেয়ে ২০২০ সালের জুন মাস থেকে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে ডিএসসিসিতে কর্মরত আছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে মশক নিধন কাজের জন্য তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়োগ করে ডিএসসিসি। নিয়োগের পাঁচ মাস পর তাদেরকে ওয়ার্ড থেকে প্রত্যাহার করে সচিব দফতরে সংযুক্ত করা হয়। তারপর থেকে নিয়মিত হাজিরা নেওয়া হলেও বেতন দেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়েনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, কর্মীদের বেতন দিতে দেরী হচ্ছে। সে কারণে কর্মীরা হিসাব বিভাগে গিয়ে যোগাযোগ করলে সেখানে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়। এ কারণে চার কর্মীকে কর্মচ্যুত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এই আদেশ প্রত্যাহার করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
অপরদিকে, কর্মীদের বেতনভাতা প্রসঙ্গে সম্প্রতি ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেছিলেন, বেতন পাচ্ছে না এটা ঠিক না। বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী বেশি রয়েছে। তারা সেটা সমন্বয় করছেন। সে কারণে একটু দেরী হচ্ছে। এই সমস্যা দূর হতে আরও একটু সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।