Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিরোজ রশিদের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের আহ্বান নির্মূল কমিটির

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:২৮

ঢাকা: সংসদে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতি কদর্য ভাষায় বিষোদগার ও নিষিদ্ধের দাবি জানানোয় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দেশের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সর্ববৃহৎ নাগরিক সংগঠন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতৃবৃন্দ স্পিকারের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিবাদ জানায়।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বন্ধের দাবি ফিরোজ রশিদের

বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, মুক্তিযোদ্ধা কলাম লেখক সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এই প্রতিবাদে লিপিতে সই করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ যে কদর্য ভাষায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতি বিষোদগার করেছেন আমরা এর তীব্র নিন্দা করি এবং সংসদের ধারাবিবরণী থেকে এ ধরনের অসংসদীয়, কদর্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলাদেশে বাস করেও কারা, কী উদ্দেশ্যে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠন করেছেন তিনি যদি তা না জানেন সেটা চরম মূর্খতারই পরিচায়ক। ‘নির্মূল’ শব্দকে নিয়ে তিনি’ ৭১-এর ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের ভাষায় বিদ্রুপ করে আমাদের প্রকারান্তরে হত্যাকারী বলেছেন। দেশেরবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা এই নামটি নির্ধারণ করেছিলেন ৭-এর গণহত্যাকারীদের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী রাজনীতির মূল উৎপাটনের জন্য, কাউকে কায়িকভাবে হত্যা করার জন্য নয়। জাতীয় পার্টি সংবিধান হত্যা করে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, জনতা হত্যা করে নয় বছরের স্বৈরশাসন অব্যাহত রেখেছিল এ ইতিহাস জাতির অজানা নয়। ৭১-এর ঘাতকদের মন্ত্রী বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর অসাম্প্রদায়িক মানবিক সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ যুক্ত করে দেশ ও জাতিকে পাকিস্তানের মতো সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং অমুসলিম নাগরিকদের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার ও মর্যাদা হরণ করে জাতীয় পার্টি ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান যেভাবে লাঞ্ছিত করেছেন দেশ ও জাতিবিরোধী এই ঘৃণ্য অপরাধের দায় জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত বহন করতে হবে।’’

বিবৃতি বলা হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে নির্মূল কমিটি যখন ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য দেশে ও বিদেশে ৩০ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে তখন থেকে বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থী গণহত্যাকারীদের দল এবং তাদের পুনর্বাসনকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্মূল কমিটির প্রতি যে বিষোদগার আরম্ভ করেছে, গতকাল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ একই ভাষায় ৩০ লাখ শহীদের রক্তের মূল্যে অর্জিত মহান জাতীয় সংসদকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বেছে নিয়েছেন যেখানে নির্মূল কমিটির কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক মাননীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা গত ৩০ বছরে বহুবার নির্মূল কমিটির মঞ্চে বক্তব্য রেখেছেন। নির্মূল কমিটির আন্দোলনের কারণে ৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচার আরম্ভ হয়েছে। নির্মূল কমিটির দাবির কারণে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত ২০১৭ সালের মার্চে আমাদের মহান জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় আমরা যখন বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ নিয়েছি তখন কাজী ফিরোজ রশীদ কাদের তুষ্ট করার জন্য নির্মূল কমিটির প্রতি বিষোদগার করছেন সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ৭১-এর ঘাতক, দালাল, রাজাকার ও নব্য রাজাকারদের বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ও সমাজ গড়ার আন্দোলন আমরা গত ৩০ বছর যেভাবে পরিচালনা করেছি, আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবার পুনঃস্থাপিত হবে এবং মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।’

এর আগে রোববার (২৪ জানুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আমাদের অনেক ভুঁইফোড় সংগঠন আছে। একটি সংগঠন আছে, নাস্তিক নির্মূল কমিটি আর একটি সংগঠন হচ্ছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এই নির্মূল করার ক্ষমতা এদের কে দিয়েছে। তুমি কে লোককে নির্মূল করার। আমাদের দেশে কোর্ট-কাচারি আছে না? ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব—এই সমস্ত সংগঠনগুলো বন্ধ করুন, যাতে কেউ নির্মূল করতে না পারে। কিসের নির্মূল কমিটি। এটা সমাজের একটা কালচার হয়ে গেছে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমআই

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি কাজি ফিরোজ রশিদ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর