নতুন মাত্রা পাচ্ছে ঢাকা-আংকারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক
২৫ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৩০
ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগতিতে যুক্ত হতে চায় তুরস্ক। অবকাঠামো উন্নয়ন, সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন, ইন্টারনেট প্রযুক্তি, হাসপাতাল, জ্বালানি, ভোগ্যপণ্য, কৃষিসহ একাধিক খাতে ঢাকায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী আংকারা। দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী এরই মধ্যে ঢাকায় বিনিয়োগ করেছেন, আরও অনেক ব্যবসায়ী বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় অপেক্ষমাণ। তার আগে দুই দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তি হবে।
দুই দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের বণিক সমিতি এফবিসিসিআই ও তুরস্কের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ডিইআইকে) মধ্যে একটি চুক্তি সই হবে। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়বে।
তুরস্কের ঢাকা দূতাবাসের কূটনৈতিক সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, এফবিসিসিআই ও ডিইআইকে‘র মধ্যে চুক্তির দিন-ক্ষণ নিয়ে দূতাবাস কাজ করছে। মধ্য ফেব্রুয়ারি কিংবা তার আগেও এই চুক্তি সই হতে পারে।
ঢাকা-আংকারা কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন সংক্রান্ত তুরস্কের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান আরচেলিক ও দেশটির তেল-গ্যাস সংক্রান্ত আরেকটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান আইগ্যাস এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। আরচেলিক সিঙ্গার বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ শেয়ার গত মার্চে কিনে নিয়েছে। আর গত জানুয়ারিতে তুরস্কের আইগ্যাস, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজেসের সঙ্গে যৌথ ভিত্তিতে এলপিজি খাতে বিনিয়োগের জন্য চুক্তি করেছে। তুরস্কের আইগ্যাস এই খাতে ৫০ মিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের ৫০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।
এদিকে, তুরস্কের নারী ব্যবসায়ী হুলিয়া জেডিক লৌহ শিল্পে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া তুরস্কের একাধিক ব্যবসায়ী ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে ঢাকায় আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করছে তুরস্ক। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার পিপিপি-ভিত্তিতে তুরস্ককে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় ৬ একর (২ দশমিক ৫ লাখ মিটার) জমি বরাদ্দের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তুরস্কের নারী ব্যবসায়ী হুলিয়া জেডিক জানান, তুরস্কের ‘এশিয়া নিউ’ নীতির আওতায় বাংলাদেশের একাধিক খাতে তুরস্কের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী। তিনি লৌহ শিল্পে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান।
তুরস্কের ডিইআইকে‘র প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের মধ্যে বছরে ৯৩৫ মিলিয়ন ডলারেরও কম বাণিজ্যিক লেনদেন হয়। আমরা এই লেনদেন বাড়াতে চাই। বাংলাদেশে খুব বিনিয়োগের ভালো পরিবেশ বিরাজ করছে এবং একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আমাদের ব্যবসায়ীরা এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এশিয়া অঞ্চলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তুরস্কের প্রথম পছন্দ। বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ রয়েছে। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার রাইজিং স্টার। দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে, যা বিনিয়োগের জন্য সবার আগে প্রয়োজন।’
রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান আরও বলেন, ‘চলমান করোনা সংক্রমণের মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রেখে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। দেশটি স্বল্পেন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে খুব শিগগিরই উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশে যুক্ত হতে যাচ্ছে। এ দেশে প্রচুর জনসংখ্যা এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে, তাই তুরস্কের ব্যবসায়ীরা এখানে বিনিয়োগ করতে চায়।’
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর
আংকারা ঢাকা-আংকারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাংলাদেশ-তুরস্ক বাংলাদেশে বিনিয়োগ