Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চালের মজুদ সাড়ে ১২ লাখ টন রাখার পরামর্শ বিএআরসি’র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৬ জানুয়ারি ২০২১ ২১:৪৮

ঢাকা: চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারি মজুদ সবসময় সাড়ে ১২ লাখ টন রাখার সুপারিশ করেছে  বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)। ‘চাল, আলু ও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ উদঘাটন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটির মিলনায়তনে এই প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৌসুমি মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে নূন্যতম ২৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে যেন সরকার কার্যকরভাবে বাজারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। বাফার স্টক হিসাবে সরকার কর্তৃক প্রতি মাসে কমপক্ষে সাড়ে ১২ লাখ টন চাল মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদন ব্যয়ের উপর কমপক্ষে ২০ শতাংশ মুনাফা বিবেচনা করে ধান চালের সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে চিকন ও মোটা চালের জন্য সরকারের আলাদা নূন্যতম সহায়তা মূল্য (এমএসপি) ঘোষণা করাসহ আরও বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়াও চাল উৎপাদনে ব্যয় কমানোর কৌশল, নিবিড় বাজার নিরীক্ষণ, ধান প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের নিয়ন্ত্রণ এবং সময়মতো সরকারি হস্তক্ষেপ বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য সহায়ক হবে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অপর্যাপ্ত মজুদ, ধান চাল সংগ্রহ করতে না পারা এবং যথাসময়ে আমদানির ব্যর্থতার কারণে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বড় চালকল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা সবসময় মনে করে সরকার স্টক সবসময় ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে বলে। এর মধ্যে বোরোতে ভালো ফলন হলেও আমনে ১৫ লাখ টন কম উৎপাদন হয়েছে। ধান চাল সংগ্রহ করতে না পেরে সরকারের মজুদ কমে যায়। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষক দলের কো-অর্ডিনেটর ও ইউজিভির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাজারে অদৃশ্য হাতের ছোঁয়া রয়েছে। এই অদৃশ্য হাত হচ্ছে চাতাল, মিলার ও কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা। সরকারের অপ্রতুল মজুদ ও দুর্বল হস্তক্ষেপের কারণে এ বছর চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

এদিকে গবেষণায় উঠে আসে, মিলাররা সরকারের সঙ্গে চালের মূল্যবৃদ্ধির যে হিসাব করে সেখানে বাই প্রডাক্ট থেকে আসা আয়ের তথ্য গোপন করে। ২০১৭-১৯ সময়ে প্রতি কেজি চাল প্রক্রিয়াজাত করে ৪.৬-৯.৫ টাকা মুনাফা করেছে। যা ২০১৮-২০ সালে ছিল ৪.৭-৮.২ টাকা। এই আয় বাদ দিলে মিলারদের লোকসান হয়, কিন্তু আয় বিবেচনায় ধরলে তাদের ভালো লাভ থাকে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। ১৯৭২-২০২০ এই সময়ে প্রতি বছর ধানের বাজার মূল্য ৪-৫ শতাংশ বাড়লেও প্রকৃত মূল্য প্রতি বছর হ্রাস পেয়েছে গড়ে ২-৩ শতাংশ হারে। ২০০৯-২০২০ সময়কালে প্রতি কেজি ধান চাষের ব্যয় প্রায় ৩ শতাংশ হারে বাড়লেও কৃষকের নিট মুনাফা কমেছে ৮ শতাংশ হারে।

আলাদা আলাদা তিনটি গবেষণায় চাল, আলু ও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ তুলে ধরা হয়েছে। ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলুর মজুদ ও হিমাগার থেকে কম সরবরাহ, হিমাগারে মজুদকৃত আলুর রশিদ বারবার বিক্রি, আলু রপ্তানি ও প্রকৃত অবস্থা সম্মন্ধে তথ্যের অভাবে সরকার কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ভারতের ওপর আমদানি নির্ভরতা ও দেশীয় অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট বাণিজ্য পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ বলে জানা গেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়া কৃষিসচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বিএআরসির সদস্য পরিচালক ড. মোশাররফ উদ্দিনসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন- পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় চালের দাম বেড়েছে: কৃষিমন্ত্রী

সারাবাংলা/ইএইচটি/এসএসএ

চাল বিএআরসি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর