Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভ্যাকসিন নিতে চান ৮৪% মানুষ: জরিপ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ জানুয়ারি ২০২১ ০০:৪৯

ঢাকা: দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষ নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। তবে এর মধ্যে ৫২ শতাংশ মানুষ একটু দেখেশুনে ধীরে-সুস্থে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী নয় ১৬ শতাংশ মানুষ।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিটিউটের এক গবেষণার ফলাফলে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকনোমিকস (আইএইচই) ও বাংলাদেশ কমো মডেলিং টিম যৌথভাবে গত ১০ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে এ জরিপ চালায়।

জরিপ বিষয়ে জানানো হয়, ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনর প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক জরিপটি দেশের আট বিভাগের আট জেলার ১৬ উপজেলা ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৩ হাজার ৫৬০ জন মানুষের ওপর করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন থেকে ৫০০ জন করে এবং উপজেলাগুলো থেকে ১৬০ জন করে মানুষকে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়।

এক ওয়েবিনারে জরিপের ফল তুলে ধরে জানানো হয়, জরিপের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয় ১০ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। জরিপকারীরা জনসমাগম বেশি হয়— এমন স্থানে গিয়ে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে নমুনা ঠিক করে তথ্য সংগ্রহ করেন। ওয়েবিনারে জরিপের ফল উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ।

তিনি জানান, যারা একটু অপেক্ষার পর ভ্যাকসিন নিতে চান, তাদের মধ্যে ৫৪ শতাংশের এই মুহূর্তে ভ্যাকসিনর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ আছে। ৩৪ শতাংশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে শঙ্কিত। বিনামূল্যে দিলে নিম্নবিত্তরা ভ্যাকসিন নিতে চান। তবে উচ্চবিত্তদের মধ্যে টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ বেশি। আর দেশের ১৬ শতাংশ মানুষ কখনোই ভ্যাকসিন নিতে চান না।

গবেষণায় উঠে আসা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের অধিবাসীদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম। আবার যারা ভ্যাকসিন নিতে ইচ্ছুক, তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। বিনামূল্যে না দেওয়া হলে আবার নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম দেখা গেছে।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিন বলেন, মোট ৮৪ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। তবে এর মধ্যে ৫২ শতাংশ এখনই না নিয়ে ধীরে-সুস্থে নিতে আগ্রহী। যে ৮৪ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী, তাদের মধ্যে অর্থের বিনিময়ে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী ৬৬ শতাংশ। আবার বয়স্কদের, বিশেষ করে ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ কম।

জরিপে জানানো হয়, নারীদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ বেশি। জরিপে তথ্য সংগ্রহের আওতায় আসা ৮৭ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তারা ভ্যাকসিন নেবেন। অন্যদিকে ৮২ শতাংশ পুরুষ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। অন্যদিকে মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি আয় যাদের, তাদের ৯২ শতাংশই টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন নিতে চান। ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসিক আয়ের মানুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৮১ শতাংশ। মাসে ২০ হাজার টাকার কম আয়ের মানুষদের ৫২ শতাংশ প্রয়োজনে টাকা খরচ করে ভ্যাকসিন দিতে চান।

এ বিষয়ে গবেষণা দলের প্রধান সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেছেন, এখানে আস্থার বিষয়টি কাজ করতে পারে। এ ছাড়া মানুষ টাকা দিয়ে ভালো সেবা পাওয়ার প্রত্যাশা করে।

কোন পেশার মানুষ ভ্যাকসিন নিতে বেশি আগ্রহী— জরিপ থেকে এ তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, জনপ্রতিনিধিদের শতভাগ, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রায় ৯২ শতাংশ, সরকারি চাকরিজীবীদের ৯০ শতাংশ, বেসরকারি চাকরিজীবীদের ৮৮ শতাংশ ও শিক্ষকদের ৮৫ শতাংশ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। সবচেয়ে কম আগ্রহ ধর্মীয় প্রতিনিধিদের, তাদের ক্ষেত্রে এই হার ৬১ শতাংশ।

যারা একদমই ভ্যাকসিন নিতে ইচ্ছুক নন, তাদের বিষয়ে জরিপে বলা হয়েছে— তারা ভ্যাকসিনের মান, কার্যকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে মূল কারণ হিসেবে জানিয়েছেন। এ ছাড়া অনেকে ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাই বোধ করেন না।

গবেষণায় সরকারের উদ্দেশে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়— মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা, মান ও সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রচারণা চালানো; ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ, তা বোঝাতে দেশের উচ্চপদস্থ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন নেওয়া; এবং ভ্যাকসিনের স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে মানুষকে জানানো ও প্রয়োজনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা নিশ্চিত করা।

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, গবেষণায় তিনটি বিশেষ কারণ উঠে এসেছে ভ্যাকসিন নিতে অনাগ্রহের বিষয়ে। এগুলো হলো— ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয় এবং ভ্যাকসিনের মান নিয়ে সন্দেহ। এর বাইরে একদল ব্যক্তি আছেন যারা মনে করেন ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা খুব একটা নেই।

ওয়েবিনারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভ্যাকসিন নিবন্ধনের জন্য তৈরি অ্যাপ ‘সুরক্ষা’ অপ্রয়োজনীয়। জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ করা যেত। অ্যাপ সবার জন্য সহজ হবে না। ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজটি সরকারের হাতে রাখাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি এখনই এই কার্যক্রমকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে না দেওয়ার আহ্বান জানান।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

করোনা ভ্যাকসিন করোনাভাইরাস করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ জরিপ টপ নিউজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ কমো মডেলিং টিম স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিটিউট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর