ভ্যাকসিন প্রয়োগে প্রস্তুত ৫ হাসপাতাল
২৭ জানুয়ারি ২০২১ ১১:২৮
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ভ্যাকসিন কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন শেষে তিনি পাঁচজনের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম দেখবেন। এরপরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আরও দুইজন নার্স ও তিনজন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিত্বকারী ২৫ জনের একটি দলকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সেই তালিকায় চিকিৎসক, নার্স, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, সাংবাদিকসহ অন্য পেশার মানুষ যুক্ত থাকবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে তিনটায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের ৩২৭ দিন পরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথম দিন ২৫ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এরপরে ২৮ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত-মৈত্রী জেনারেল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান জানান, এই পাঁচ হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন দিয়েই দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী তাদের পর্যবেক্ষণ করা হবে, তাদের মধ্যে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কিনা সেটা দেখা হবে।
এদিকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত রাজধানীর এই পাঁচ হাসপাতাল। দেশে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষণের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। আর সেই কাজে সবকিছু ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের। যাতে শুরুটা দেখে দেশের মানুষ পরবর্তী সময়ে ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। এজন্য ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও প্রয়োগ পরবর্তী সময়ে পর্যবেক্ষণ এবং যদি কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
ইতোমধ্যেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় বুথ তৈরি করা হয়েছে। বুথগুলোতেই ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহীরা এসে ভ্যাকসিন নেবেন।
দেশের নাগরিকদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের আওতায় আনার জন্য ইতোমধ্যেই দেশে সরকারের পক্ষ থেকে আনা হয়েছে ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র ভ্যাকসিন। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি এই ভ্যাকসিন দেশে আনা হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে। এছাড়াও ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ চার হাজার ডোজ ভ্যাকসিন রাখা হয়েছে তেজগাঁওয়ের জেলা ইপিআই সেন্টারে। ইতোমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর প্রথম চালানের ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতিও দিয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই ৭০ লাখ ভ্যাকসিনের ভেতরে ৬০ লাখ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে প্রথম মাসে। দ্বিতীয় মাসে দেওয়া হবে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন। তৃতীয় মাসে দেওয়া হবে আবার ৬০ লাখ। প্রথম মাসে ভ্যাকসিন পাওয়াদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে তৃতীয় মাসে। আর এই হিসাব অনুযায়ী ভ্যাকসিন বিতরণ পরিকল্পনা ইতোমধ্যে করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস চুক্তি অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় ভ্যাকসিন পৌঁছে দেবে।
দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিমালা অনুযায়ী প্রথম দফায় ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এই পর্যবেক্ষণ পর্বে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের যাত্রা শুরু কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে
২৭ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে তিনটায় ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে। এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যদি শেষ মুহূর্তে কোনো ধরনের পরিবর্তন না হয় তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রথম দিন প্রতিষ্ঠানটির তিনজন নার্স ভ্যাকসিন নেবেন। এর মধ্যে প্রথম ভ্যাকসিন নেবেন প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। এরপর হাসপাতালের আরও দুই সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নী খাতুন এবং রিনা সরকারও ভ্যাকসিন নেবেন। এছাড়াও এদিন চিকিৎসক হিসেবে প্রথম ভ্যাকসিন নেবেন প্রতিষ্ঠানটির মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মবিন ও শাহরিয়ার আলম। এছাড়াও ডা. এনামুল ও ডা. ফরিদা নামের দুইজনের চিকিৎসকেরও এই ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি জানান, প্রথম দফায় যারা ভ্যাকসিন পাবেন, তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও পুলিশ, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ থাকবেন। এই হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমেই দেশে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে।
ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২৫ জনকে দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালের ১০০ কর্মীকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য মোট চারটি বুথ থাকবে। আলাদা একটি ওয়ার্ড করা হয়েছে, কারও প্রয়োজন হলে ব্যবহার করতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘২৮ তারিখের জন্যেও ১০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি ৫০ জনের আরেকটি টিম স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র ২৭ কিংবা ২৮ জানুয়ারি না, এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি দীর্ঘসময় চালাতে হবে ধরে নিয়েই এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমদিকে প্রস্তুতি হিসেবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে এর জন্য আলাদা ম্যানেজমেন্ট টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ২০টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য। একইসঙ্গে চার শয্যার আইসিইউ ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
ভ্যাকসিন প্রয়োগে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মোটিভেশন করা হচ্ছে জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেন, ‘খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে আমাদের ইচ্ছে হাসপাতালের সিনিয়র কর্মকর্তাদের দিয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরুর করার। যাতে সবার মধে যদি বিন্দুমাত্র আতঙ্ক বা আশঙ্কা থাকে তা কেটে যায়।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রয়োগ কিন্তু বাংলাদেশে নতুন কিছু না। কিন্তু তাও যেহেতু সম্পূর্ণ নতুন একটা রোগের ভ্যাকসিন তাই আলাদাভাবে সতর্ক থাকা হচ্ছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্মের পর থেকেই ইপিআই’র সবগুলো ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে থাকে। কোভিডের ভ্যাকসিন নতুন হলেও তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়াও অন্য কোনো বিকল্প নেই। ভ্যাকসিন আসবে এমন আশা নিয়ে আমরা একটা বছর ধরে অপেক্ষা করছি। সুতরাং ভ্যাকসিন পাওয়ার পরে এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। পৃথিবীতে এমন কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি যেটার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। কোনোটার বেশি, কোনোটার কম। অনেকগুলো ধাপ পেরিয়েই আমরা এখন ভ্যাকসিন পেয়েছি। তাই ভয় না পেয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’
দ্বিতীয় দিনে পাঁচ হাসপাতালে প্রয়োগ হবে ভ্যাকসিন
২৭ জানুয়ারি উদ্বোধন শেষ ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ পাঁচটি হাসপাতালে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২৮ জানুয়ারি ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভ্যাকসিন প্রয়োগ বিষয়ে ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ২৮ জানুয়ারি এখানে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই হাসপাতালের স্টাফদের মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া বিষয়ে কথা বলে একটা তালিকা করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিচতলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে শুরুতে নারীদের জন্য দুটি এবং পুরুষদের জন্য দুটি বুথ থাকবে। পরে বুথ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন ১০০ জনকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, আনসার সদস্য, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আমরা ভ্যাক্সিন দেবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেক চিকিৎসক প্রথম দিনেই ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি নিজেও হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে প্রথমে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। আমার কলিগদের ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করতে, উৎসাহ দেওয়ার জন্য, আস্থা জোগাতে আমি ভ্যাকসিন নিতে চাই।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, “ভ্যাকসিন দেওয়ার পর সবকিছু পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেজন্য বুথের কাছেই একটি ‘পোস্ট ভ্যাকসিন এরিয়া’ প্রস্তুত করা হয়েছে। ভ্যকসিন নেওয়ার পরে সবাইকে এখানে পর্যবেক্ষণ করা হবে। আশা করছি, সবকিছু ভালোভাবেই শুরু করা যাবে।”
তিনি বলেন, ‘যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সংক্রমণ শনাক্তের ফলাফল নেগেটিভ হওয়ার চার সপ্তাহ আগে কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর সবাইকে আধা ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, কারও কোনো সমস্যা হয় কিনা দেখার জন্য। সেখানে চেয়ার ও বেড থাকবে। যে যেভাবে চাইবেন, সেখানে অবস্থান করবেন। আধা ঘণ্টা অবস্থান করে তারা চলে যাবেন। যদি কারও সমস্যা হয়, প্রটোকল অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা দেবো।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি
২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ২৮ জানুয়ারি ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হবে।
বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে হাসপাতালে প্রথমে ২০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ২৮ তারিখ আমরা এই প্রতিষ্ঠানেও ভ্যাকসিন প্রয়োগ করব। পরবর্তী সময়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখে সাধারণ নাগরিকদের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘২৪ জানুয়ারি এই হাসপাতালে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি কীভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। পুরাতন শেরাটন হোটেলের উল্টোদিকে আমাদের একটা বিল্ডিং আছে। এটা আমরা এতদিন কোনো কাজে ব্যবহার করিনি, এখন ভ্যাকসিনেশনের জন্য নিচতলা প্রস্তুত করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য জাতীয়ভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি চালু হবে তখন এ হাসপাতালে মোট আটটি বুথ থাকবে এবং প্রতিটি বুথে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য দুইজন নার্স এবং চারজন করে স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। ভ্যাকসিন দেওয়ার পর পোস্ট ওয়েটিং রুমে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে তারা ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে থাকবেন। আর এই সময়ে তাদের পর্যবেক্ষণের জন্য থাকবে একটি মেডিকেল টিম এবং স্ট্যান্ডবাই আরেকটি মেডিকেল টিম থাকবে। যেখানে একজন ইন্টারনাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট, দুইজন রেসিডেন্স এবং একজন আইসিইউ স্পেশালিস্ট থাকবেন।’
তিনি জানান, আটটি অবর্জারভেশন বেড প্রস্তুত করা হয়েছে জীবনরক্ষাকারী সবধরনের ওষুধ এবং যন্ত্রপাতিসহ। সেখানে ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করা হবে, আর এই সময়ে যদি কারও আরও অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন হয় তাহলে হাসপাতালের সি ব্লকে ১০ তলায় চারটি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) হিসেবে। আর এই কাজে একেবারেই একটি ডেডিকেটেড অ্যাম্বুলেন্সও রাখা হয়েছে।
ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হাসপাতালের ৩০০ জন চিকিৎসক ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। যার তালিকা আমার কাছে রয়েছে। তবে নার্সদের, তৃতীয় চতুর্থ, এমএলএসএস, আনসার এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা যার যার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করছেন। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, সব বিভাগ থেকেই কয়েকজন করে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বলা ২০০ জনের তালিকা করা হবে।’
হাসপাতাল পরিচালক হিসেবে তিনি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াও ভ্যাকসিন নিতে নিবন্ধন করেছেন জানিয়ে পরিচালক বলেন, ‘আমি এবং ভিসি মহোদয় দুজনই ভ্যাকসিন নিচ্ছি। হাসপাতালের অন্যদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি এবং এটা আমাদের প্রয়োজন ও দায়িত্ব।’
মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রস্তুতি
২৮ জানুয়ারি রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘ভ্যাকসিন রাখার জন্য হাসপাতালে আইএলআর (হিমায়িত বাক্সের মধ্যে ভ্যাকসিন সংরক্ষণের ব্যবস্থা) ফ্রিজ রয়েছে যেখানে তিন হাজার ভ্যাকসিন রাখার ব্যবস্থা আছে। এ হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী, টেকনোলজিস্টসহ মোট ১ হাজার ৪৭ জন কর্মী রয়েছেন। ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ১০০ থেকে ১৫০ জনের মতো মানুষকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এ হাসপাতাল থেকে ইতোমধ্যে ১০০ জনের একটি তালিকা অধিদফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে আমাদের এখানে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা থাকবে। হাসপাতালের ভেতরে ভ্যাকসিনেশন সাইটে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-যেমন রক্তচাপ, ফুসফুসের অবস্থা এবং অ্যালার্জির কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা- এসব কিছু যদি ঠিক থাকে তাহলে তাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সেখানে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে ৩০ মিনিটে। আর তাদের দেখার জন্য থাকবে একটি মেডিকেল টিম। যদি কোনো সমস্যা না হয় তাহলে তারা বাসায় চলে যাবে এবং তখন তাদের একটি টেলিমেডিসিনের জন্য ফোন নম্বর দেওয়া হবে। যদি বাড়ি যাওয়ার পর কোনো সমস্যা হয় তখন ওই নম্বরে তিনি কল করে প্রয়োজনীয় সেবা নেবেন।’
আশা করছি, সবকিছু ভালো ভাবেই সম্পন্ন করা যাবে যাতে ভ্যাকসিন প্রয়োগে সাধারণ মানুষ উৎসাহ পায়- বলেন ডা. অসীম কুমার নাথ।
কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের প্রস্তুতি
২৮ জানুয়ারি রাজধানীর কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল বলে পরিচিত কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। অন্যান্য হাসপাতালের ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও এখানে সেটি এখনো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. এ কে এম সরয়ার উল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা আমাদের প্রস্তুতিপর্ব প্রায় গুছিয়ে নিয়েছি। যারা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করবেন তাদের প্রশিক্ষণ শেষ পর্যায়ে। একইসঙ্গে যারা ভ্যাকসিন নিবেন তাদের তালিকাও চূড়ান্ত হয়ে যাবে খুব দ্রুতই। আশা করছি, সবকিছু ভালোভাবে শেষ করে আমরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু করতে পারব।’
২৭ জানুয়ারি উদ্বোধন হবে ভ্যাকসিন নিবন্ধনের প্লাটফর্ম ‘সুরক্ষা’
২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন শেষে চালু করা হবে দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগে আগ্রহীদের নিবন্ধনের জন্য তৈরি করা প্লাটফর্ম যার নাম ‘সুরক্ষা’। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেছেন, ‘সুরক্ষা প্লাটফর্মে নিবন্ধন ছাড়া কেউ ভ্যাকসিন নিতে পারবে না।’
সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (www.surokkha.gov.bd) গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধনের কাজটি সারতে হবে।
সুরক্ষা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপে নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ ও একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে। সেই মোবাইলেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের তারিখ জানানো হবে তাকে।
নিবন্ধনের সময় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, কিডনি রোগের মতো দীর্ঘমেয়াদী কোনো রোগ আছে কিনা; কিংবা কখনও কোভিড-১৯ হয়েছিল কিনা তা জানাতে হবে নির্ধারিত ঘরে। আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রদান কেন্দ্র নির্ধারণে পর নির্দিষ্ট বাটন চেপে তথ্যগুলো সংরক্ষণ করলে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধন নিশ্চিত করা হবে।
নিবন্ধিত আবেদনকারী যেকোনো সময় ওই পোর্টাল থেকে তার ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। পরপর দুই ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ শেষে এই পোর্টাল থেকেই পাওয়া যাবে ভ্যাকসিন সনদ।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম