‘দুর্নীতি দমনকে আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করতে হবে’
২৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:১৮
ঢাকা: সব স্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অটল থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতির বিষবৃক্ষ সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলে দেশের প্রকৃত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি স্থায়ী সুশাসনভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।’
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যক্তিপর্যায়ে কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা খুব দরকার। এজন্য বিদ্যমান আইনকানুন, নিয়মনীতির সঙ্গে দুর্নীতি দমনকে একটি আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সকল স্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল ও বহুমাত্রিক কাজ করছে। ফলে এক দশক আগের তুলনায় দুর্নীতি অনেকাংশে কমে এসেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘নেশন মাস্ট বি ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট করাপশন। পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলাইজড না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ কর যাবে না।’ বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে একটি আন্দোলন গড়ে তোলা। যাতে নাগরিকগণ চরিত্রনিষ্ঠ হয়, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠাসমূহে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা পায়। দুর্নীতি প্রতিরোধে মানুষকে নৈতিক জীবন-যাপনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
সংসদ নেতা আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সংগ্রামের চালিকাশক্তি ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজের স্বপ্ন। কিন্তু রাষ্ট্রের ৫০ বছরের ইতিহাসে সেই স্বপ্ন বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে, পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং মুখ থুবড়ে পড়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নেমে আসে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং শুদ্ধাচারের অভাব।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার এই অব্যবস্থা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। এই যুদ্ধকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তার শাসনামলে একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে হলে দেশবাসীকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়াতে হবে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না- চরিত্রের পরিবর্তন না হলে এই অভাগা দেশের ভাগ্য ফেরানো যাবে কি না সন্দেহ। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও আত্মপ্রবঞ্চার ঊর্ধ্বে থেকে আমাদের সকলকে আত্মসমালোচনা, আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারও রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সকল কাজে আত্মশুদ্ধি ও চরিত্রনিষ্ঠার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর হতে এ পর্যন্ত দেশ থেকে দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে এবং সকল স্তরে দুর্নীতি রোধকল্পে বেশকিছু আইন প্রণয়ন করেছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের উৎসমুখগুলোর বন্ধ করার লক্ষ্যে অনলাইনে টেন্ডারসহ বিভিন্ন সেবা খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি হ্রাসে সরকার সচেষ্ট থাকার কারণে বর্তমান সরকারের আমলে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রভাবমুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকারের দুর্নীতি বিরোধীকার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বিগত ১০ বছরে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক ১৩ হাজার দুটি অভিযোগের অনুসন্ধান, ৩ হাজার ৫০৯টি মামলা রুজু এবং ৪ হাজার ৪০৭টি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমআই