Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কেনার লোক নেই, শাকসবজি ফেলে দিচ্ছি’

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৯ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৪০

ঢাকা: ‘দাম কম হওয়ায় ক্রেতা নেই। বাজারে একটা সময় কেনার কেউ থাকেন না। যে কারণে প্রতিদিন অবিক্রিত শাকসবজি ডাস্টবিনে ফেলে দিই। কিছুই করার নেই। সবজির দাম যখন বেশি হয় তখন সবাই বলে দাম কম হয় না কেন? অথচ দাম কমলেই মানুষ যেন খাওয়া বন্ধ করে দেয়। দাম কমলেই পাইকার বলেন আর খুচরা বিক্রেতা বলেন সবার লাভ কমে যায়।’

শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা সারাবাংলার কাছে এভাবেই তাদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন।

শ্যামবাজারে দুপুর ১২টায় নাজিম উদ্দিন নামে একজন পাইকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরাই একটু দাম থাকলে বাজার গরম করে ফেলেন। দেখেন এতবড় ( আনুমানিক আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন) একটি ফুলকপি মাত্র ৮ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছি। এখানকার খুচরা বিক্রেতারা সেটি ১০ টাকায় বিক্রি করছেন। বাইরে হয়ত সেটি বড়জোর ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন। সব সবজির দাম কম। এত কম যে, প্রতিদিন অবিক্রিত শাকসবজি ডাস্টবিনে ফেলতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বগুড়ার নয়মাইল বাজার থেকে সবজি কিনে ট্রাক ভাড়া দিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসি। আমরা একটি ফুলকপি ৮ টাকায় বিক্রি করছি। ভাবেন কৃষক কত টাকা পেয়েছে কপিটাতে। ঢাকার চেয়ে গ্রামে সবজির দাম ভালো পাওয়া যায়। এখন সবাই ঢাকামুখী হওয়ায় ঢাকাতেই শাক সবজির দাম। পচনশীল হওয়ায় দুই একদিন রাখাও যায় না।

আলতাম হোসেন সবজি নিয়ে এসেছেন চুয়াডাঙ্গা থেকে। তিনি এনেছেন শিম, গাজর, বড় বেগুন, ফুলকপি, টমেটো ও ব্রকলি। একমাত্র ব্রকলি ২০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন বাকি সব সবজির দাম ২০ টাকার নিচে বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, ‘সবজির দাম কমলে মনে হয় বাঙালি খাওয়া বাদ দেন। অথচ একটু দাম থাকলে তখন খাই খাই করেন। তখন বলেন, দাম এত বেশি কেন? দাম এত বেশি কেন? সবজির দাম বেশি থাকলে কৃষক, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা সবাই ভালো লাভও করতে পারেন। দাম না থাকলে কারও লাভ থাকে না।’

লিটন নামে একজন গাইবান্ধার ধাপেরহাট থেকে টমেটো, শিম, ব্রকলি, মেথি শাক, লাল শাক, বথুয়া শাক আর মটরশুটি নিয়ে এসেছেন। শাক বিক্রি করছেন ৫ টাকা আটি। ভালো মানের টমেটো বিক্রি করছেন ২০ টাকা আর মটরশুটি ৩০ টাকা কেজি। দাম বৃদ্ধি না পেলে তিনি আর ঢাকায় শাক সবজি আনবেন না বলে জানান।

মঞ্জুর রহমান নামে একজন ক্রেতা বলেন, ঢাকার আশেপাশে থেকে ফ্রেস শাক সবজি তুলে ভ্যানে করে বিকেল বেলা অলিগলি বিক্রি করছেন। সেগুলোরও দাম কম। প্রায় একই দামে পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ফ্রেসটাই কিনছেন। যে কারণে অনেকে বাজার থেকে বাজার করছেন না।

কাপ্তান বাজারে এসেছেন মোসলেমা বেগম মীম। তিনি বলেন, ‘বাসায় সবজি কেউ খেতে চায় না। তাই কম কেনা হয়। আবার বেশি কিনলে নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য যতটুকু লাগে ততটুকুই কেনা হয়।’

সুত্রাপুর বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, অনেক অবিক্রিত মালামাল থাকে। শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। পানি দিলে পচে যায়। ডাস্টবিনে ফেলতে হয় অনেক কিছু। দাম কমলে লাভ পাওয়া যায় না। ধরেন যখন ৪০ টাকায় শিম বিক্রি করেছি তখন কেজিতে ১০ টাকা লাভ করেছি। আর এখন ১০ টাকা লাভ করতে তিন থেকে চার কেজি শিম বিক্রি করতে হয়। আবার কিছুদিন আগেও একটি ফুলকপি ৩০ টাকা বিক্রি করে ১০ টাকা লাভ করেছি। আর এখন সেই ১০ টাকা লাভ করতে তিনটি ফুলকপি বিক্রি করতে হয়। অনেক সময় তাও হয় না। সামান্য দাগ পড়লেই সেটি অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হয়। পাতাকপি দুই টাকা লাভে ছেড়ে দিতে হয়। সবাই টাটকা খোঁজে আবার একইসাথে দামও কম খোঁজে।

শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) শ্যামবাজারে বড় সাইজের ফুলকপি বিক্রি করছেন জোড়া ২০ টাকা। ছোট সাইজের গুলো জোড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা। বড় পাতাকপি ১০ টাকা পিস, শিম বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা, শসা ২৫ টাকা কেজি, খিরা ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, টমেটো ২০ টাকা কেজি, বেগুন মান ভেদে ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ টাকা কেজি, সব ধরণের আলু ২০ টাকা কেজি এবং লাউ ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে। সবধরনের শাক ৫ টাকা আটি ও লাউ শাক ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাজর ২০ টাকা কেজি, মুলা ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি ও মটরশুঁটি ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে সুত্রাপুর কাঁচা বাজারেও। এই বাজারে আজ টাকি মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়ে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে টাকি মাছ। অন্যান্য মাছ ও মাংসের দাম আগের মতোই বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা কেজি ও কর্ক ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

কাপ্তান বাজারে সবজির দাম প্রায় একই রকম থাকলেও কিছু জিনিসপত্রে দাম বেশি দেখা গেছে। এরমধ্যে পেঁয়াজ ৩০ টাকা, মটরশুঁটি ৩৫ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, ও কাঁচা মরিচ ২৫ টাকা পোয়া বিক্রি হচ্ছে।

সকাল ১১ টা যাত্রাবাড়ী বাজারে দেখা যায়, সবজির দাম অনেকটাই কম। শ্যামবাজারের মতোই সবজির দাম। মাছের দামও এখানে কম। যাত্রাবাড়ীতে শুধু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মটরশুঁটি। ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে এক কেজি মটরশুঁটি। এছাড়া পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি, আলু ২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মুন্সি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন সবজির সরবরাহ অনেক বেশি। তাই দাম অনেক কম। প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে সবজি। ফেলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। দাম কম থাকলে ব্যবসায়ীরা লাভ করতে পারেন না।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

কাঁচাবাজার টপ নিউজ শাকসবজি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর