জয়ের পর ভুলে যান নেতা, গ্রামবাসীদের উদ্যোগেই সংস্কার হলো সড়ক
২৯ জানুয়ারি ২০২১ ২১:৪৯
নেত্রকোনা: জেলার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামে সাড়ে তিন কিলোমিটারের মতো মাটির সড়ক রয়েছে। তবে এই সড়কটি দেড় যুগের বেশি সময় ধরে অবহেলিত। নেতাদের আশ্বাসে সংস্কার না হতে হতে হয়ে পড়েছিল চলাচলের অনুপযোগী। পরে মল্লিকপুরের বাসিন্দারা মিলেই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করেন।
বারহাট্টা উপজেলায় যখনই স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচন আসে তখন প্রার্থীদের কাছে এলাকার মানুষের একটাই দাবি থাকে যেন এই সড়কটি পাকা করা হয়। প্রার্থীরাও ওয়াদা দেন, কিন্তু জিতে গিয়ে সব ভুলে যান জনপ্রতিনিধিরা। এভাবে কেটে গেছে দেড় যুগ, তবু রাস্তার কোনো উন্নয়ন হয়নি।
এই সড়কপথে মল্লিকপুর, ধারাম, তেলিকুড়ি, চন্দ্রপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার লোক যাতায়ত করেন। শুকনো মৌসুমটা পায়ে হেঁটে কোনোভাবে পার করতে পারলেও বর্ষায় লোকজনের কষ্টের সীমা থাকে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার করা, উৎপাদিত পণ্য বাজারে নেওয়া, বয়স্ক বা জরুরি রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রার্থীরা নির্বাচনে পাস করার পর তা ভুলে যান। সড়ক পাকা করার কথা দিয়েছিলেন বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চন। এমনকি নির্বাচনের আগে ভোট নেওয়ার জন্য গ্রামবাসীর আস্থা অর্জনে লোকজন দিয়ে পুরো সড়কটিতে ফিতা টেনেও মাপামাপি করেছিলেন তিনি। কিন্তু পাস করার পর অন্য সবার মতো তিনিও ভুলে যান সব।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মল্লিকপুর গ্রামের লোকজন মিলে গ্রামের সড়কটি নির্মাণে লেগে পড়েন। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় গ্রামের প্রায় আড়াইশ লোক মিলে মাটি কেটে সড়ক নির্মাণ করছেন।
সড়ক নির্মাণে উদ্ধুদ্ধকারী লালন বখত মজুমদার বলেন, ‘এই একটি সড়কে বছরের পর বছর ধরে কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সড়কটা পাকা করে দেবে সেই আশায় এতটা বছর ধরে যত চেয়ারম্যান-এমপি হয়েছেন তাদের ভোট দিয়েছি। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। শেষে বাধ্য হয়ে আমরা নিজেরাই চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটে সড়ক বানাচ্ছি। প্রায় একমাস যাবত আমরা প্রায় আড়াইশো মানুষ মিলে সড়কে মাটি কাটছি।’
সড়কে মাটি কাটছেন সাবেক মেম্বার রিয়াজ উদ্দিনও। তিনি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে, তাই গ্রামের লোকজন মিলেই কাজ শুরু করেছি।’
সারাবাংলা/এমও