Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষে বাড়ছে ফলন, পরিণত হচ্ছে লাভজনক কুটির শিল্পে

এম এ হালিম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩০ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:০৩

ভৈরব: সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষে লাভবান হচ্ছে ভৈরবের খামারিরা। এখানকার আহরিত মধু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাছাড়া চাষিদের কাছে মৌ চাষের প্রশিক্ষণ নিতে প্রতিদিন খামারে আসছেন স্থানীয় বেকার যুবকেরা। বর্তমানে এটি একটি লাভজনক কুটির শিল্পে পরিণত হচ্ছে।

বাংলাদেশ মৌ চাষ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক ও নির্বাহী পরিচালক জানান, আরডিসি থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৭ হাজার লোক মৌমাছি চাষে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে ৫ হাজার মৌমাছি চাষি সারাদেশে সরিষা ক্ষেতে বক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

ভৈরবের মাঠে এখন হলুদের সমারোহ। চারিদিকে সরষে ফুলের মৌ মৌ গন্ধ। প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌমাছি চাষিরা মৌ বক্স নিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। সরিষা ক্ষেতে মৌ বক্সের মাধ্যমে প্রতিদিন মধু আহরণ করছেন চাষিরা। তাদের আহরিত মধু বিভিন্ন এলাকার লোকজন কিনে নিচ্ছেন। শুধু তাই নয় এলাকার অনেকেই মৌমাছি চাষ শিখতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে মৌ চাষিদের কাছ থেকে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোকজন মৌমাছি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

মৌ চাষিরা জানান, মৌমাছি চাষ একটি লাভজনক খাত। যেকোনো বেকার যুবক মৌমাছি চাষ করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। তাছাড়া খাঁটি মধুর চাহিদা থাকায় এর দামও বেশি, ফলে লাভও হয় অনেক। যে কারণে প্রতিবছর ভৈরবে মৌমাছির চাষ বাড়ছে।

এ বছর ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ ও আগানগরসহ বেশ কয়েকটি সরিষা ক্ষেতের ১০ জন মৌ চাষি ২৫০টি বক্সের মাধ্যমে মধু আহরণ করছেন। প্রতিমাসে গড়ে একেকটি খামার থেকে ৩/৪ মণ মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষারও বাম্পার ফলন হয়েছে। আর সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষের ফলে ফসলে পোকামাকড় ও রোগবালাই কম হয় এবং সরিষায় পরাগায়নের ফলে ফলনও ভালো হয়। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আগামীতে এর চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে কৃষি অফিস আশা করছে।

বিজ্ঞাপন

কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের সরিষা চাষি শাহিন মিয়া, ইদ্রিছ মিয়া,আক্কেল আলীসহ অনেকেই জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষের ফলে ফসলে পোকামাকড় ও রোগবালাই কম হয় এবং সরিষায় পরাগায়নের ফলে ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে সরিষার দর ভালো হলে অনেক লাভের আশা করছেন তারা।

কালিকাপ্রসাদ ও আগানগর ইউনিয়নের মৌমাছি খামারে মৌ চাষ করে মধু আহরণের প্রশিক্ষণ নিতে আসা বেকার যুবক আলমগীর হোসেন, ফয়সাল মিয়াসহ কয়েকজন তরুণ জানান, তাদের গ্রামে দূর  থেকে অনেকেই মৌমাছি চাষ দেখতে আসে এবং মধু কিনে নেন। তাই তারাও মৌমাছি চাষ শিখছেন।

ভৈরব উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চন্দন কুমার সূত্রধর জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে চলতি মৌসুমে ভৈরবে বারি ১৪-ও ১৫ জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। অল্প খরচে অধিক ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন। তাছাড়া সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষের কারণে সরিষায় পরাগায়ণ ঘটেছে। ফলে কোনোপ্রকার পোকা বা রোগবালাই না থাকায় সরিষার ফলন ভালো হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৭ হাজার লোক মৌমাছি চাষে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫ হাজার মৌমাছি চাষি সারাদেশে সরিষা ক্ষেতে বক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। সরিষা থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করে সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাছাড়া মৌমাছি চাষে খামারিদের কারিগরি ও যন্ত্রপাতিসহ সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত আছে। এছাড়া যারা প্রশিক্ষণ নিতে ইচ্ছুক তারা যদি মৌ চাষ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করে তাহলে তাদেরও প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

এছাড়া ভৈরব সরিষার ভাণ্ডার বলে এখানে চলতি মৌসুমে ৮/১০ জন খামারি বক্সের মাধ্যমে মৌ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে এটি একটি লাভজনক কুটির শিল্পে পরিণত হচ্ছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/এমও

কুটির শিল্প ভৈরব লাভজনক সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর