বিলুপ্তপ্রায় আরসিসি গরু সংরক্ষণে কাজ করছে বিএলআরআই
৩০ জানুয়ারি ২০২১ ১১:০৩
সাভার : বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি গরুর জাত চট্টগামের রেড চিটাগাং ক্যাটেল বা (আরসিসি)। কিন্তু এই জাতের গরু এখন ক্রমেই বিলুপ্তির পথে। এমনকি চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত কমে আসছে এই জাতের গরুর সংখ্যা।
তবে দেশীয় এই জাত দ্রুত বিলুপ্ত বন্ধে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)। বর্তমানে ইনস্টিটিউটের কাছে ৩০৩টি আরসিসি গরু আছে। জাতটি আরও উন্নত করে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কার্যক্রম চলমান আছে।
অনন্য এই জাতের গরু ইতিবাচকভাবে বদলে দেবে দেশের প্রাণিসম্পদের চেহারা এমনটাই প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)।
আরসিসি বা রেড চিটাগাং ক্যাটেল, চট্টগ্রাামের বিশেষ জাতের সুদর্শন গরু। লাল বর্ণের এ জাতের গরু দেখতে ছোটো খাটো, পেছনের দিক বেশ ভারী, চামড়া পাতলা, শিং ছোটো ও চ্যাপ্টা। এদের মুখ খাটো, চওড়া, মাঝারি ধরনের গলকম্বল, গলা খাটো ও সামান্য কুঁজো আছে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, আরসিসির ওজন ১৭৫ থেকে ২৫০ কেজি পর্যন্ত হয়। গড় দুধ উৎপাদন ২ দশমিক ৮ কেজি। এক বিয়ানে ২৩৫ দিনে ৬০০ থেকে ১৫শ কেজি দুধ পাওয়া যায়।
এ জাতের গরুর দুধে চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি, তাই এই দুধ অনেক সুস্বাদু হয়। দেশের আবহওয়ার সঙ্গে টেকসই এই জাতের গরুর ব্যবস্থাপনা খুব সহজ। এ গরু জীবদ্দশায় ১৪ থেকে ১৫টি বাচ্চা দিয়ে থাকে।
প্রাণিসম্পদ ইনস্টিটিউট জানায়, গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথমে ৮টি ষাঁড় ও ৩১টি আরসিসি গাভি সংগ্রহ করা হয়েছিল। এখন আরসিসির সংখ্যা ৩০৩টি।
তিনি আরও জানান, কম খাবার খেয়ে এই জাতটি বেশি বাচ্চা ও দুধ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিবেশের জন্য এই জাত খুবই লাগসই। বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় এই জাতকে সারা দেশে খামার ও কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
রেড চিটাগাং ক্যাটেল উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্প ২য় পর্যায়ের প্রকল্প পরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রেড চিটাগাং ক্যাটেল অত্যন্ত আকর্ষণীয় গরু। এ জাতের গরু প্রতিবছর একটি করে বাচ্চা দেয়। আরসিসি গাভি খামারিদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৩ থেকে ৪ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। তবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লালন পালন করলে ৮ থেকে ৯ লিটার পর্যন্ত দুধ পাওয়া সম্ভব। এই জাতের ষাঁড় বাচ্চা গুলো প্রতিদিনের দৈহিক ওজন বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আকর্ষণীয় রংয়ের হওয়ায় বাজারে বেশি মূল্যে বিক্রির মধ্য দিয়ে আর্থিক ভাবে খামারিরা বেশি লাভবান হবেন। আর বকনা বাছুরগুলো তুলনামূলকভাবে আকারে ছোট হওয়ায় এদের লালন পালনে খরচ একেবারেই কম।
তিনি আরও বলেন, ‘এই জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষা করে সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রজনন পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রামের বিশুদ্ধ আরসিসিকে ভালোমানের বেশি দুধের গাভির পেটের ষাঁড়ের বীজ দিয়ে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ভালোর সঙ্গে ভালো (বেস্ট টু বেস্ট) পদ্ধতির মাধ্যমে দেশীয় সম্পদের উন্নয়নের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জানান, আরসিসি আমাদের দেশের মূল্যবান সম্পদ তাই এই জাতটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে জনমিক গবেষণা ছাড়াও আইপি আরের জন্য প্রয়োজন এমন পাঁচটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ দেশীয় জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা মনে করছেন, এ জাত উন্নয়নের মাধ্যমে একদিকে দেশের প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পূরণ হবে অপরদিকে স্বাস্থ্যকর অত্যন্ত সুস্বাদু ও অর্গানিক মাংস হিসেবে অধিক মূল্যে বিদেশে রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
সারাবাংলা/একে