Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৭ বছরে বিদেশে পাচার সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা— অনুসন্ধানে দুদক

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩০ জানুয়ারি ২০২১ ২২:২৮

ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি-রফতানির মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে গত ৭ বছরে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। ওই হিসেবে বিশেষ করে পোশাক শিল্প রফতানির আড়ালে বছরে পাচার হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ইতোমধ্যে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা গেছে, ঢাকার সাভারের ‘একেএম নিটওয়্যারের’ ১৭৫ কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগে বর্তমানে মাঠে আছে দুদক। সব মিলিয়ে অর্থ পাচারের বিষয়ে দুদকের নজরদারিতে রয়েছে প্রায় অর্ধশত গার্মেন্টস মালিক।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)। জিএফআইয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি-রফতানির মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। এভাবে গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা। জিএফআই বলছে, মূল্য ঘোষণার বাড়তি অংশের অর্থই পাচার হচ্ছে বিদেশে।

জানা গেছে, পণ্য আমদানি-রফতানির সময় প্রকৃত মূল্য দেখানো হয় না। মূল্য ঘোষণার বাড়তি অংশই পাচার হয় বিদেশে। জিআইএফ’র ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অর্থ পাচারকারী শনাক্তে মাঠে নেমেছে দুদকের অনুসন্ধানী টিম। কিন্তু প্রতিবেদনটিতে অর্থ পাচারের পরিমাণ ও পদ্ধতি সম্পর্কে উল্লেখ থাকলেও পাচারকারীদের কোনো নাম নেই।

বিজ্ঞাপন

তবে পাচারকারীদের শনাক্তে মাঠে নামার পরই গোয়েন্দা তথ্য পায় দুদক। এরই মধ্যে তারা জানতে পেরেছে, পণ্য রফতানির আড়ালে অর্থপাচার করেছে সাভারের পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আল মুসলিম গ্রুপের একেএম নিটওয়্যার। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ ও ১৬ সালে ১৭৫ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করেছে। কিন্তু এই টাকা দেশে আসেনি। এমন তথ্যের ওপর অনুসন্ধানে নামে দুদক। তবে যেসব গার্মেন্টস মালিকরা দুদকের নজরদারিতে রয়েছে তাদের নাম-পরিচয় এখনই প্রকাশ করতে চায় না কমিশন।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগটি বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার সংক্রান্ত। প্রাথমিকভাবে এটিকে আমরা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ হিসেবে দেখছি। সেজন্য দুদক অভিযোগটি পেয়ে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে। সবো‍র্চ্চ গুরুত্ব দিয়ে এর অনুসন্ধান করছে কমিশন। বর্তমানে আমরা আল মুসলিম গ্রুপের মালিকদের ১৭৫ কোটি টাকা পাচারের তথ্য অনুসন্ধান করছি। এ অর্থ আমাদের দেশের ও জনগণের। এত অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে পাচার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এবং দুদক তা মেনেও নেবে না ‘

উল্লেখ্য, অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন করা হয় ২০১২ সালে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর এ আইন সংশোধন করা হয়। আইন অনুযায়ী, বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচার মানিলন্ডারিং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থ বা সম্পত্তি পাচার হিসেবে যেসব বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, সেগুলো হলো আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দেশের বাইরে সম্পত্তি বা অর্থ প্রেরণ বা রক্ষণ বা দেশের বাইরের যে অর্থ-সম্পত্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে এবং যা বাংলাদেশে আনয়নযোগ্য ছিল, কিন্তু তা আনা হতে বিরত থাকা বা বিদেশ হতে প্রকৃত পাওনা দেশে না আনা বা বিদেশে প্রকৃত দেনার অতিরিক্ত পরিশোধ করা।

মানিলন্ডারিং অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন চার বছর ও সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণ ও সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডও করা হতে পারে।

সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম

অনুসন্ধান জিএফআই দুদক প্রতিবেদন বিদেশে পাচার সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর