তাদের প্রতি সন্তুষ্ট বিএনপি, কর্মসূচি আসছে…
৩১ জানুয়ারি ২০২১ ১০:০৮
ঢাকা: একবছর আগে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন এবং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রতি সন্তুষ্ট বিএনপি। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং শেষ পর্যন্ত ‘মাটি কামড়ে’ মাঠে পড়ে থাকার মানসিকতার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ বিএনপির হাইকমান্ড।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, অবিভক্ত ঢাকার প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, সাবেক মেয়র দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে বিভক্ত ঢাকার দক্ষিণ সিটিতে একজন জনপ্রিয় মেয়র প্রার্থী খুঁজছিল বিএনপির হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে গত নির্বাচনে প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে বেছে নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। মির্জা আব্বাস, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, মহানগর নেতা নবী উল্লাহ নবী, সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের মতো প্রবীণ ও পরীক্ষিত নেতাদেরকে বিবেচনায় না নিয়ে ইশরাকের ওপরই আস্থা রেখেছিল বিএনপির হাইকমান্ড। বিএনপির তরুণ এই নেতাও দলের সেই আস্থার প্রতিদান দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। নির্বাচনে হারলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একটা চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলেন। নির্বাচন পরবর্তী নানা সংকটে, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, সাহায্য-সহিযোগিতা দিয়ে, দলীয় নেতাকর্মীদের বিপদ-আপদে এগিয়ে এসে মাঠ পর্যায়ের নেতা থেকে বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের নেতায় পরিণত হয়েছেন তিনি। এই সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে তার প্রতি সন্তুষ্ট বিএনপির হাইকমান্ড। এর ফলে দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এখন তার ডাক পড়ে। বিশেষ সমাদরও করা হয়।
বিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচনে উত্তর সিটির মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন তাবিথ আউয়াল। সেবার প্রবল প্রতাপশালী হেভিওয়েট প্রার্থী প্রয়াত আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মাত্র চার ঘণ্টা ভোট করে কয়েক লাখ ভোট পেয়েছিলেন তরুণ এই নেতা। তাই গত বছর অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরের জন্য আর নতুন কাউকে খুঁজতে যায়নি বিএনপির হাইকমান্ড। এবারও তিনি আস্থার প্রতিদান দেন।
নির্বাচনে হারলেও প্রচার-প্রচারণা, জনসংযোগ— কোনো কিছুতেই পিছিয়ে ছিলেন না তাবিথ আউয়াল। কয়েক দফা হামলার শিকার হয়েও মাঠ ছাড়েননি তিনি। নির্বাচনের পরও নানা ইস্যুতে মাঠে থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। করোনাকালে নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে নির্বাচনি এলাকার সাধারণ মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির তরুণ এই নেতা। এসব কারণে বিএনপির হাইকমান্ড তার প্রতিও সন্তুষ্ট। এরই ফলে বিএনপিতে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে তার।
দলীয় সূত্রমতে, ঢাকার দুই সিটির পর দেশের অন্যতম বৃহৎ নগরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনেও (চসিক) আরেকটি আস্থার জায়গা খুঁজছিল বিএনপি। সাবেক মেয়র মনজুর আলমের সরে পড়া, আব্দুল্লাহ আল নোমান কিংবা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতো ‘বড়’ নেতাদের সিটি ‘মেয়র’ হিসেবে ‘বেমানান’ দেখানোয় একটা উত্তম বিকল্প প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল বিএনপির। সেই জায়গায় নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনই ছিল দলটির হাইকমান্ডের প্রথম পছন্দ। তাই আগ-পিছ না ভেবে এবারের নির্বাচনে শাহাদাতের হাতেই ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেয় বিএনপি।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছে, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা দলের যেকোনো পর্যায়ের নেতার জন্য কঠিন কাজ। নির্বাচনে ভালো ফলাফলের সম্ভবনা কম থাকা সত্ত্বেও পকেটের টাকা খরচ করে ভোটে দাঁড়ানো, নেতাকর্মী-সমর্থকদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলা এবং ভোট শেষে খালি হাতে ঘরে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত জেনেও যারা স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন, তারা এমনিতেই সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। বিএনপি হাইকমান্ডের কাছে চসিক নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনেরও প্রাপ্তি এ ক্ষেত্রে দশে দশ।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকা, কেন্দ্র থেকে শীর্ষ নেতারা না গেলেও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের আগে মাঠ চষে বেড়ানো, নির্বাচনের দিন আহত-আক্রান্ত নেতাদের পাশে দাঁড়ানো, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা, সর্বোপরি চট্টগ্রামে বিএনপর ঐক্য ধরে রাখা— সব মিলিয়ে শাহাদাত হোসেনের প্রতি সন্তুষ্ট তার দল।
দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনে হারলেও ঢাকার দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন যেভাবে বিএনপিতে মূল্যায়ন পাচ্ছেন, একইভাবে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে হারলেও ডা. শাহাদাত হোসেন আগামীতে বিএনপিতে সেভাবে মূল্যায়ন পাবেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, “আমাদের তিন মেয়র প্রার্থী হারেননি। তাদেরকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি— তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ডা. শাহাদাত হোসেন ‘জনগণের মেয়র’। সুতরাং জনগণের মেয়র হিসেবে যেভাবে মূল্যায়ন করা উচিত, বিএনপি তাদেরকে সেভাবেই মূল্যায়ন করবে।”
‘আর তাদের প্রতি সন্তুষ্ট ছিল বলেই বিএনপি তাদেরকে মনোনয়ন দিয়েছিল। ভোটের মাঠে তারা যে পারদর্শিতা দেখিয়েছে, তাতে তাদের প্রতি সন্তুষ্টির মাত্রা আরও বেড়ে গেছে,’— বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এদিকে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একবছর পূর্তি এবং গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘ব্যাপক কারচুপি’র অভিযোগ এনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা ভাবছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর