Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঝুলে আছে ডিসিদের রিটার্নিং অফিসার হওয়ার ‘বৈধতার’ মামলা

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩১ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৫৪

ঢাকা: একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের বৈধতা প্রশ্নে তিন সপ্তাহের জন্য রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সেই রুলের জবাব রাষ্ট্রপক্ষ আজ অবধি দেয়নি। আর মামলার বাদীপক্ষও শুনানির বিষয়ে নতুন কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় বিষয়টি সেভাবেই ঝুলে আছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়ে প্রতিটি জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ পাওয়া নিয়ে একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার কারা হচ্ছেন তা নিয়ে রাজনীতিবিদেরাও নানা মন্তব্য করে থাকেন।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের ৬৪টি জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুর রহমান। পরে আদালত এ বিষয়ে রুল জারি করেন।

‘ডিসিদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের বৈধতা প্রশ্নে জারি হওয়া রুলের শুনানি কোন পর্যায়ে আছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে এ মামলার রিটের পক্ষের আইনজীবী সাকিব মাহবুব সারাবাংলা বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। সরকার পক্ষ রুলের জবাব না দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার কার্যক্রম থেমে আছে।’

তবে এ বিষয়ে নিজেরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী সাকিব মাহবুব।

২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা গেজেট কেন ‘অবৈধ, অসাংবিধানিক ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না। তা জানতে চেয়ে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন।

তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জ্যেষ্ঠ আইন সচিব, জনপ্রশাসন সচিব এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

নির্বাচন কমিশনের ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুর রহমান একই বছরের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাকিব মাহবুব। রাষ্ট্র্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আদেশের পর ওইদিন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আদালত রুল জারি করলেও জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই। আদালত নিয়োগ স্থগিত করেননি। তবে রুল শুনানির পর যে রায় হবে, তাতে কোনো নির্দেশনা থাকলে তা ভবিষ্যৎ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

আর আইনজীবী সাকিব মাহবুব বলেছিলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ইসির ৬৮৯ কর্মকর্তার মধ্যে থেকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের ক্ষমতা ইসির হাতে। এর বাইরে অন্য কাউকে ওই দায়িত্ব দেওয়ার এখতিয়ার ইসির নেই।’

নির্বাচন সামনে রেখে ৬৪ জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

রিট আবেদনে বলা হয়, ডিসিদের নির্বাচন পরিচালনাকারী হওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের কারণে এ সাংবিধানিক বাধা দেখা দিয়েছে। অথচ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা থাকার পরেও রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ডিসিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সারাদেশের মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের ১০ জন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, ১৯ জন সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ৪৫ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ৫১২ জন, থানা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ৬৮৯টি কর্মকর্তার পদ রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়েও শতাধিক কর্মকর্তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন।

সাকিব মাহবুব আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশনের নিজেদের যে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। সেই লোকবলকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বশীল জায়গায় পদায়ন করা সম্ভব। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের যেসব কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের দিয়েই রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের পদগুলো পূরণ করা সম্ভব। কারণ তাদের এসব বিষয়ে দীর্ঘদিনের ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মাঝে মধ্যে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা রাখা হলেও জাতীয় নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের হাত গুটিয়ে বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এবং সকল দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে ডিসিদের। এ ছাড়া যোগ্য ও দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার পদে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ রাখা হচ্ছে না। এটাকে আমরা আইনসম্মত মনে করি না। এটাকে সংবিধানও সমর্থন করে না। আমরা মনে করি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ডিসিদের রিটার্নিং অফিসার হওয়ার সুযোগ নেই।’

এ সব বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  তবে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা করে আসছে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

বিভিন্ন নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের রিটানিং কর্মকর্তা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলাকে জানান, ‘সরকারের কিংবা কোনো শক্তিশালী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গ্রুপের স্বার্থ থাকলে সেখানে এগুলোর সুরাহা হয় না। তবে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ থাকলে সেসব মামলার শুনানির জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হয়।’

গুরুত্বপূর্ণ এ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

জেলা প্রশাসক ডিসি নিম্ন আদালত রিট রিটার্নিং হওয়া হাইকোর্ট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘আমাদের সেনাবাহিনী যেন তৈরি থাকে’
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২৯

আগস্টে কমেছে মূল্যস্ফীতি
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৭

সম্পর্কিত খবর