ইসির বিরুদ্ধে মামলায় যাচ্ছেন শাহাদাত
৩১ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কেন্দ্র থেকে কাগজে হাতে লিখে ভোটের ফল ঘোষণা দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন।
রোববার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শাহাদাত বলেন, ‘ইভিএমে ভোটের ফলাফল দেওয়ার কথা প্রিন্টেড কাগজে। কিন্তু তা না দিয়ে হাতে লেখা কাগজে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ২৭ তারিখের সেই প্রিন্টেড কাগজ দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
এসময় কয়েকটি হাতে লেখা ফলাফলের কাগজ উপস্থাপন করে শাহাদাত বলেন, ‘শুধু তিন নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের চারটি কেন্দ্রে প্রিন্টেড কাগজ দেওয়া হয়েছে। বাকি সব কেন্দ্রে দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতে লেখা ফলাফল।’
ভোটের হার ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ নিয়ে কারচুপির অভিযোগ তুলে শাহাদাতের দাবি- তিনি সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৫টি ভোটকেন্দ্রের ২৬০টি বুথে গেছেন। তিনি দেখেছেন পাঁচ থেকে ছয় শতাংশের বেশি ভোট সেখানে পড়েনি। দুই ঘণ্টার মধ্যে এত ভোট নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
‘বোঝা যাচ্ছে প্রিজাইডং অফিসারের কাছে ১৫ শতাংশ ভোট দেওয়ার ক্ষমতা নৌকার পক্ষে কাজে লাগিয়েছে। এ কথা আমরা বারবার বলেছি প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে যেন ভোট রাখা না হয়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার নিয়ম আছে। এবার সেটাও করা হয়নি। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রাপ্ত ভোট ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮, আর ধানের শীষের ভোট ৫২ হাজার ৪৮৯টি। রাত পৌনে ২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেল সাড়ে ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে, যেটা বাস্তবিক অর্থে ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ।‘
এছাড়া ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের পরও ফল পেতে ১০ ঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিএনপির এই প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ও তাদের অজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের ভাষায় নির্বাচন ব্যবস্থাকে সহজীকরণের জন্য ইভিএম পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল যন্ত্র ইভিএম-এ ৭৩৩ কেন্দ্রের ফলাফল দিতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্তু সেখানে সময় লাগলো ১০ ঘণ্টা।’
সিটি করপোরেশন নির্বাচন চট্টগ্রামের ইতিহাসে ‘ভোট লুটের মহোৎসব’ ও ‘সহিংসতার কলঙ্কজনক’ অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে মন্তব্য করে শাহাদাত অভিযোগ করেন- ‘বহিরাগতরা’ অনেক প্রিজাইডিং অফিসারের সহায়তায় ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজেরা ইভিএম মেশিনের বোতাম টিপে নৌকার ভোট নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি অনেক কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ভোটারদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার পর ব্যালেট প্যানেলে নৌকার প্রতীকে নিজেরাই চাপ দিয়ে দেয়। অনেক থানার ওসি মেয়র প্রার্থীর জন্য রক্ষিত ইভিএম মেশিন ভোটকেন্দ্রের গোপন বুথ থেকে বাইরে এসে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করেছিল।
বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীদের ভোট কম দেখানোর অভিযোগও এনেছেন শাহাদাত। তিনি বলেন, ‘১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে এক বছর আগে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক ডিউক ৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তার ভোট দেখানো হয়েছে ৩৩৪টি। একইভাবে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের ইয়াছিন চৌধুরী আশু, মোহরা ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আজম, পাথরঘাটা ওয়ার্ডের ইসমাইল বালিসহ অনেক জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন। তাদের প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০।’
জোর করে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুঃননির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, দক্ষিণ জেলা কমিটির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, মহিলা দল নেত্রী মনোয়ারা বেগম মণি উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে শাহাদাত হোসেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে প্রায় ৩ লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। আর ধানের শীষ প্রতীকের শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই