Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উত্তাল বেরোবির রসায়ন বিভাগ, প্রশাসন ভবনে তালা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩১ জানুয়ারি ২০২১ ২৩:২৮

রংপুর: উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

রোববার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন তারা। রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্তও তাদের আন্দোলন অব্যাহত ছিল।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে প্রশাসনিক ভবনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তুলতে আসা শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। বেশ কয়েকটি বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ক্যাম্পাস আন্দোলনে উত্তাল থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, উপউপাচার্য ড. সরিফা সালোয়া ডিনা ও রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তফা কামালের কেউই ক্যাম্পাসে আসেননি।

আন্দোলনরতরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিভাগীয় অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে তিন বছর মেয়াদে বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত করবেন উপাচার্য। কোনো বিভাগে অধ্যাপক না থাকলে সহযোগী অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে একজনকে বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত করার কথা।

আন্দোলনরত বিভাগটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গত বছরের ১৩ জুন আমার বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব শেষ হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকীর দায়িত্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু উপাচার্য আইন ও নিয়ম ভেঙে তার ঘনিষ্ঠ তানিয়া তোফাজকে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন, যদিও তিনি ড. বিজনের চেয়ে জুনিয়র এবং তিনি সহকারী অধ্যাপক।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগীয় প্রধান নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের দু’টি গ্রুপের মধ্যে বছরখানেক ধরে দ্বন্দ্ব-রেষারেষির বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। এ বিষয়টি তীব্র সেশনজটভুক্ত এই বিভাগটির শিক্ষার্থীদের জররন্য ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’তে পরিণত হয়েছে।

বিভাগটির আরেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী বলেন, উপার্চা আইন ভেঙে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়ায় আমি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হই। হাইকোর্ট বিভাগীয় প্রধান হিসাবে আমাকে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপর প্রায় একবছর পেরিয়ে গেলেও উপাচার্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেননি।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে বিভাগের প্রধান নিয়োগের দাবিতেই আজ আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব।

এদিকে, শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-রেষারেষি ও দলাদলির প্রভাব পড়ছে তাদের ওপর। ফলপ্রকাশ ও প্রত্যাহারের বিষয় নিয়ে ভয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না শিক্ষার্থীরা। তবে বিভাগের প্রধান নিয়োগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানে দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, অতি দ্রুত আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের মাধ্যমে ক্লাস পরীক্ষায় ফিরতে চান তারা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৫ সালে ক্লাস শুরু করে সাত বছরেও তারা অনার্স শেষ করতে পারেননি। তারা তীব্র সেশনজটের মধ্যে আছেন, যদিও তাদের সঙ্গে অন্য বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ক্যাম্পাসও ছেড়েছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন পর ফলপ্রকাশ করে আবার প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা সার্বিক বিষয়গুলোর দ্রুত সমাধান দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আতিউর রহমান ও ছাত্র উপদেষ্টা নূর আলম সিদ্দীক সমাধানের জন্য আন্দোলনস্থলে আসেন। কিন্তু বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ ছাড়া আর কোনো সমাধান নেই বলে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাকে জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানতে চাইলে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান সেলিম বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তবে এ বিষয়ে বেরোবি রেজিস্ট্রার, উপউপাচর্য ও উপাচার্যের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

এদিকে যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

আন্দোলন চেয়ারম্যান নিয়োগ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বেরোবি রসায়ন বিভাগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর